প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় দেখা যাচ্ছে, আসানসোল দক্ষিণ ছাড়াও পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ায় এ বার নতুন মুখ। ওই দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন যথাক্রমে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও হরেরাম সিংহ। বিধানসভায় প্রার্থী হিসেবে নতুন হলেও এই দু’জনই জেলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত মুখ। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের পর্যবেক্ষণ, খনি-শিল্পাঞ্চলের এই দুই আসনে দু’জনকে প্রার্থী করার অন্যতম কারণ, তাঁদের সঙ্গে শ্রমিকদের যোগাযোগ।
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘কেকেএসসি’ (‘কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস’)-র সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নরেন চক্রবর্তী। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনও বলেন, ‘‘এই দুই আসনে দলের শ্রমিক নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়াটা স্বাভাবিক। খনি ছাড়াও, বিস্তীর্ণ শিল্পতালুক রয়েছে এখানে। ফলে, প্রচারে ও ভোটে আমাদের প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পাবেন।’’
হরেরামবাবু ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিএমএস অনুমোদিত খনি শ্রমিক সংগঠন ‘খাদান শ্রমিক কংগ্রেস’-এর ইসিএল শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৯-এ কেকেএসসি-র জন্মলগ্ন থেকেই ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তিনি। তৃণমূলের মূল সংগঠনের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি যাতে ঘটে, সে জন্য এক বছর আগে তাঁকে দলের অন্যতম জেলা কো-অর্ডিনেটরও করা হয়।
তবে আসন হিসেবে জামুড়িয়া তৃণমূলের জন্য বরাবরই কঠিন ঠাঁই। বরাবর বামের হাতে থাকা এই আসনে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি তৃণমূলের থেকে প্রায় কুড়ি হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জামুড়িয়ার ভূমিপুত্র কাউকে প্রার্থী করা হোক, এই মর্মে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। অণ্ডালের বহুলার বাসিন্দা হরেরামবাবু প্রার্থী হওয়ার পরে, তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ও ২-এর ব্লক সভাপতি যথাক্রমে সাধন রায় ও সুকুমার ভট্টাচার্যদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা কোনও ভূমিপুত্রকে প্রার্থী চেয়েছিলাম। তবে হরেরামবাবু শ্রমিক নেতা হিসেবে এলাকায় বহুল পরিচিত।’’ হরেরামবাবু নিজেও বলেন, ‘‘দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’’ তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ইসিএল-এ রাজ্যের খনিগুলিতে কর্মী সংখ্যা ৫৮ হাজার। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কেকেএসসি-র সদস্য। প্রচারে এর সুফল অবশ্যই পাব।’’ পাশাপাশি, এই বিধানসভা এলাকায় কম করে ৩০ শতাংশ হিন্দিভাষী ভোটারের মন পেতেও হরেরামবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
এ দিকে, সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তৃণমূলে থাকাকালীন দলের অন্দরে জিতেন্দ্রবাবুর বরাবরের বিরোধী হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্রনাথবাবুর পাণ্ডবেশ্বর থেকে টিকিট পাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কারণ, জিতেন্দ্রবাবুকে বিজেপি যদি এই আসনে প্রার্থী করেও, তবে ‘সাংগঠনিক ভাবে বাড়তি সুবিধা’ পেতে পারেন নরেন্দ্রনাথ— এমনই দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের। ছাত্রাবস্থায় পড়ুয়াদের জন্য বাসের ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার আন্দোলন, পরে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে ছাত্র পরিষদ করা নরেন্দ্রনাথবাবু তৃণমূলে আসার পরে সামলেছেন ছোড়া পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের (কৃষি, সেচ ও সমবায়) দায়িত্বও। পাণ্ডবেশ্বরের বাঁকোলার বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথবাবুর টিকিট পাওয়ার অন্যতম কারণ, পাণ্ডবেশ্বরে দলের ব্লক সভাপতি হিসেবে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা, মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ।
নরেন্দ্রনাথবাবু শুক্রবার বলেন, ‘‘পাণ্ডবেশ্বরে দলকে জেতানোই প্রধান লক্ষ্য।’’