শঙ্কর সিংহের নামে দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র।
দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে মোটের উপর পুরনো ‘টিম’-এর উপরেই ভরসা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী।
চমক বলতে একটিই— কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে তারকা প্রার্থী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। জেলায় সর্বোচ্চ, প্রায় ৫৪ হাজার ভোটের ‘লিড’ পায় বিজেপি। এর পরেও প্রবল গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়েছে দিন-দিন। রুপোলি চমকে সেই গভীর সঙ্কট তৃণমূল ঢেকে ফেলতে পারে কি না তা বোঝা যাবে পরে।
গত কিছু দিন ধরেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের হাবভাব দেখে দলের কর্মীদের একাংশের ধারণা হয়েছিল, এ বার বুঝি তালিকায় আর পুরনোদের অনেকেরই ঠাঁই হবে না। অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হল না। প্রায় কোনও আসনেই পরীক্ষা নিরীক্ষার ঝুঁকি নেয়নি রাজ্যের শাসক দল।
করিমপুরে বছর দুয়েক আগে মহুয়া মৈত্রের ছেড়ে যাওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে জিতে এসেছিলেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিমলেন্দু সিংহ রায়। তাঁকেই বহাল রাখা হয়েছে। তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তকে টিকিট না দিয়ে তাপসকুমার সাহাকে তার পুরনো জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হল। পলাশিপাড়ার আসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে সিপিএমের কাছে পরাজিত মানিক ভট্টাচার্যকে।
প্রথম থেকেই জেলা সভানেত্রীর নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ। জেলায় দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অনেকেই দাবি করছিলেন, সেই কারণে এ বার তাঁর ভাগ্যে টিকিট না-ও জুটতে পারে। কিন্তু তাঁর বদলে ওই কেন্দ্রে দাঁড়ানোর মত কোনও মুখ সম্ভবত এখনও উঠে আসেনি।
কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রে উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাঁড়ানো কার্যত প্রত্যাশিতই ছিল। নবদ্বীপের বিধায়ক পুন্ডরীকাক্ষ সাহা অসুস্থতার কারণে টিকিট না-ও পেতে পারেন বলে মনে করছিলেন কেউ-কেউ। কিন্তু তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছেন নেত্রী। চাপড়াতে রুকবানুর রহমানকে সরিয়ে জেলা নেত্রীর ঘনিষ্ট জেবের শেখকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জোর জল্পনা ছিল। কিন্তু বদল হল না সেখানেও।
২০১৯ সালে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রায় ৩১ হাজার ভোটে পরাজিত প্রথমরঞ্জন বসু যে এ বার টিকিট পাবেন না, প্রায় সকলেই তা ধরে নিয়েছিল। সেই জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে রানাঘাটের প্রাক্তন সাংসদ তাপস মণ্ডলকে। তবে গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল যতই ৪৩ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে থাকুক, সমীরকুমার পোদ্দারই প্রার্থী রইলেন। হরিণঘাটায় নীলিমা নাগও রইলেন। অনেকের অনুমান ভুল প্রমাণ করে কল্যাণী কেন্দ্রে রইলেন রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসও। যদিও তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের ভিতরে চোরা ক্ষোভ রয়েছে, নেতৃত্ব সে সবে গুরুত্ব দিতে নারাজ।