রাজীব বিশ্বাস, কাশীনাথ বিশ্বাস, পরেশ পাল।
ভরা বৈশাখের গরমেও কাঁকুড়গাছির নার্সিংহোমের বাইরে লোকজন ‘দাদার’ অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ভিতরে একটি কেবিনে স্থানীয় কিছু নেতা শলা করছেন। ‘দাদা’ কোথায়, তাঁরাও বলতে পারছেন না! তবু দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের বিরক্তি নেই। কারণ, ‘দাদার মহিমা অপার’!
‘‘বেলেঘাটার ভোটে ‘পরেশদার’ এই মহিমাই আসল শক্তি,’’ বলছিলেন ফুলবাগানের তৃণমূলকর্মী মানস দত্ত। এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের বিপদে-আপদে বিধায়ক পরেশ পাল পাশে দাঁড়ান। নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে তাই জনপ্রিয়তাও রয়েছে। শোনা যায়, এ বার নাকি পরেশের বদলে তাঁর সঙ্গে ‘মধুর সম্পর্ক’ থাকা এক নেতাকে টিকিট দেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু শেষমেশ পরেশেই ভরসা রেখেছে দল।
তৃণমূল বলছে, পাঁচ বছর আগে বিধানসভায় প্রায় ২৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন পরেশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় প্রবল পদ্ম হাওয়াতেও তৃণমূল এই বিধানসভায় প্রায় ৫১ হাজার ভোটে এগিয়েছিল। সেটাই এ বার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। হিসেব বলছে, বেলেঘাটা এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেটা রাজ্যের শাসক দলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। এর পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াতে পাড়ায়-পাড়ায় নাগরিক বৈঠকও করেছেন তৃণমূল প্রার্থী। ‘দুর্মুখ’ বলে পরিচিত বিধায়কের এ হেন আচরণে ‘আপ্লুত’ মানসবাবুর মতো তৃণমূলকর্মীদের একাংশ।
গত দু’টি ভোটে তৃণমূলের এগিয়ে থাকা নিয়ে অবশ্য বিরোধীদের কটাক্ষ, পরিবর্তনের জমানায় ভোট ‘লুট’ হয়েছে বেলেঘাটায়। তাতেই এমন জয় এসেছে। বেলেঘাটার ভোটে ‘সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গ অবশ্য নতুন নয়। বাম জমানায় তৎকালীন শাসক দলের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠত। গত কয়েক বছরে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ‘জায়গা বদল’ করে নিয়েছে।
এ বার অবশ্য সিপিএম প্রার্থী রাজীব বিশ্বাস ‘জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী’। বলছেন, ‘‘নিরপেক্ষ ভোট হলে আমরাই জিতব। মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।’’ বিধায়কের ‘জনদরদী’ ভাবমূর্তিকে প্রশ্ন করেই তিনি বলছেন, ‘‘কোভিড-আমপানের সময়ে আমরাই মানুষের পাশে ছিলাম। শাসক দলের কারও দেখা মেলেনি।’’ এমনকি, সংখ্যালঘু ভোটও এ বার বামেদের দিকে ফিরবে বলে আশাবাদী তিনি। একদা বামেদের গড় ছিল বেলেঘাটা। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি সেখানে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বাম নেতারা মানছেন, ভোট অনেকটাই অন্য খাতে বয়ে গিয়েছে। ‘‘কিন্তু লকডাউনে মানুষ বুঝেছেন, বামেরাই দরকারে পাশে থাকে,’’ বলছেন বাম প্রার্থী।
লোকসভায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এ বার বিজেপি বেলেঘাটায় কেমন ফল করবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে অনেকেরই। প্রার্থী কাশীনাথ বিশ্বাসের নামের ফ্লেক্স দেখা যাচ্ছে, অটোয় প্রচারও হচ্ছে। তবে প্রচারে ঝাঁঝের খামতি পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, একদা কাশীনাথের সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল। তাই লড়তে নেমে প্রতিপক্ষের কৌশলও কিছুটা তাঁর জানা। মেরুকরণের প্রভাবও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর সঙ্গেই স্থানীয় রাজনীতির হালহকিত জানা এক বাসিন্দার সংযোজন, ‘‘টিকিট না-পেয়ে তৃণমূলের এক নেতা অনুগামীদের নিয়ে ছোট-ছোট গোপন বৈঠক করছেন। তাঁর সঙ্গে পরেশের ‘সখ্য’ কিন্তু এলাকায় সুবিদিত।’’
এ কথা একান্তে মানছেন তৃণমূলকর্মীদের অনেকেও। তবে ‘দাদার কীর্তি’ অক্ষুণ্ণ রাখতে আপাতত ‘ঘরের কথা’ বাইরে পাঁচ কান করছেন না তাঁরা।