বাহারি টুপিতে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
পরতে গেলে লাগে। কিন্তু ছিঁড়তে গেলেও বাজে! এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব সযত্নে এড়িয়ে চলার দাবি করেন তাঁরা।
দার্জিলিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাম্প্রতিক ছবিটা তবু অনেককেই ভাবাচ্ছে। ঐতিহ্যশালী নেপালি ‘ঢাকা টুপি’তে তাঁর ভোটপ্রচারের ছবি দেখে ফেলেছে বাংলা তথা ভারত। মোড়কটা সৌজন্য, সংস্কৃতির! তবু এর আড়ালে কোন টুপিতন্ত্রের বার্তা, সেটাও নিয়েও অনিবার্য কাটাছেঁড়া।
অনেকেই ভোলেনি, কী ভাবে এক দশক আগে তাঁর ‘টুপি-নীতিতে’ অটল ছিলেন গুজরাতের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী। একটি অনুষ্ঠানে মধ্য গুজরাতের এক সুফি ইমামের উপহার সৌজন্যের ফেজ টুপি পরতে রাজি হননি নরেন্দ্র মোদী। বলেওছিলেন, টুপি পরে ‘তোষণের বিকৃতিতে’ তিনি নেই। “ছবি তুলে লোকের চোখে ধূলো দেব না।’’
তিনি টুপি পরান, টুপি পরেন না—এই মর্মে তখনও মোদীকে নিয়ে সরব হয়েছিল কংগ্রেস-সহ তাঁর বিরোধী-শিবির। তাতে তিনি দৃকপাত করেননি। বরং নির্দিষ্ট ধাঁচের টুপি বা পোশাক নিয়ে তাঁর যে ছুৎমার্গ রয়েছে, তা পরে প্রধানমন্ত্রী মোদীও গোপন করেননি। বরং সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদীদেরও পোশাক দেখেই চেনা যাচ্ছে বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি।
টুপি, দাড়ি বা কোনও নির্দিষ্ট পোশাক যে একটি বিশেষ পরিচিতির প্রতীক তা মানেন মোদীর বাংলা বা দিল্লির সহযোগীরা। কিন্তু ভোটচক্র বড়ই বিচিত্র। তাই ভোটের আগে টুপিরই রকমফের স্বাগত অমিত শাহের কাছেও। মোদী-ভক্তেরা অবশ্য তাতে অভিনব কিছু দেখছেন না। বাস্তবিক গুজরাতের ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির তখতে বসেও সময় বিশেষে নানা কিসিমের টুপি পরেছেন। গুজরাতের রংবেরঙের, মুক্তোখচিত পাগড়ি তো আছেই! নাগাল্যান্ডের হর্নবিল উৎসবে বিশেষ টুপি, অসমের ঢাউস গোল বেতের টুপি, পঞ্জাবের সর্দারদের গেরুয়া পাগড়ি— এখনও পর্যন্ত কিছুই বাদ দেননি। ইন্টারনেট সাক্ষী, দিল্লির রাজ্যপাটে তাঁর 'বিশ্বস্ততম' বলে খ্যাত অমিত-ও এই টুপিতন্ত্রে মোদীজির পদাঙ্ক হুবহু মেনে চলছেন। যার শেষতম নমুনাই দার্জিলিং দেখেছে।
ইতিহাসবিদ সুগত বসুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মোদী-শাহের এই টুপি-নীতিতে স্পষ্টতই তাঁদের রাজনীতির ঘরানার প্রকাশ। কোন টুপি পরা যাবে, তা যেমন দেখা যাচ্ছে। কোন টুপি ব্রাত্য তা-ও স্পষ্ট। টুপি নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গিই বলে দিচ্ছে ওঁরা গোটা ভারতকে আপন করতে পারেননি।’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু কিন্তু মনে করাচ্ছেন, অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ইফতারের অনুষ্ঠানে ফেজ টুপি পরতে দেখা গিয়েছে। ‘‘বাজপেয়ীজি ফেজ টুপি পরতেন। অমিতজি বা মোদীজি পরেননি। এটা ব্যক্তিগত অবস্থান। এর মানে বাজপেয়ী ধর্মনিরপেক্ষ, মোদী নন এটা ভাবা ভুল’’, বলছেন সায়ন্তন। টুপি নিয়ে বিজেপির ঘোষিত নীতি নেই বলে জানিয়েও সায়ন্তনের দাবি, ‘‘ফেজ টুপি আর বিভিন্ন প্রদেশের টুপি ঠিক এক নয়।’’
ঠিকই। এ ভারতে সবার কাছে, সব টুপি নয় সমান!