ফাইল চিত্র।
এক সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁদের সখ্য ছিল দেখার মতো। দল বদলের পরে সেই পুরনো বন্ধুকেই আর একজন বিঁধলেন ‘চাল চোর মন্ত্রী’ বলে।
গত দশ বছর ধরে যে কোনও ভোটের আগে বার বার উত্তর ২৪ পরগনায় প্রচারে এসেছেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকে সাড়া দিয়েই তিনি এই জেলায় প্রচারে জোর দিতেন বলে জানতেন দলের অনেকেই। দুই নেতার সখ্যের কথাও ফিরত দলের অন্দরে। অতীতে হাবড়ায় সভা করতে এসে মঞ্চেই শুভেন্দু এবং জ্যোতিপ্রিয় একে অন্যকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন। এমন বহু মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। সেই শুভেন্দু এখন বিজেপিতে। তিনি দল ছাড়ছেন কিনা, এই নিয়ে যখন চর্চা চলছিল বিভিন্ন মহলে, তখনও হাবড়ায় সাংবাদিক বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেছিলেন, শুভেন্দু দলের সৈনিক। দলেই থাকবেন। তবে পরিস্থিতি বদলেছে। বদলেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। হাবড়ার নাংলায় মঙ্গলবার সভা করতে এলেন শুভেন্দু। জ্যোতিপ্রিয়কে ভোটে হারানোর ডাক দিয়ে তাঁর নাম না করে বললেন, ‘‘এখানে যিনি আছেন, বিরাট মাপের চাল চোর মন্ত্রী। রাইস মিলের লোকেরা আমায় বলছেন, ব্যাটাকে হারান।’’
শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘নোটবন্দির সময়ে রাজ্যের দু’জন বিধায়ক টাকা বদল করেছিলেন। আমার কাছে নথি আছে। একজন পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক, তিনি ১৫ কোটি টাকা বদল করেছিলেন। আর একজন এখানকার বিধায়ক, তিনি ৪ কোটি টাকা বদল করেছিলেন।’’ শুভেন্দুর বক্ততৃা শুনে তৃণমূল শিবিরের অনেকেই বিস্মিত। রাজনৈতিক দায়েই পুরনো বন্ধুকে এ সব বলে আক্রমণ করলেন শুভেন্দু, মনে করছেন অনেকে। জ্যোতিপ্রিয়ও অবশ্য পরে কড়া প্রতিক্রিয়াই দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা। শুভেন্দু আয়নায় নিজের মুখের প্রতিচ্ছবিটা দেখুন। কী ছিলেন, আর কী হয়ে গিয়েছেন। নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছেন।’’
তাঁর কথায়, ‘‘সেচ ও পরিবহণ মন্ত্রী থাকার সময়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন কিনা, তারও তদন্ত দাবি করছি। শুভেন্দুর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত দুর্নীতিতে ভরা।’’
এ দিনের সভায় বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ সভাস্থলে মঞ্চের নীচে বসে বক্তৃতা শুনেছেন। মঞ্চ থেকে নেমে শুভেন্দু তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশন রাহুলকে ৪৮ ঘণ্টা প্রচার না করার নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও তিনি সভায় গেলেন কেন?
রাহুলের যুক্তি, ‘‘দর্শক হিসেবে বসেছিলাম। মঞ্চ উঠিনি। প্রচারও করিনি। দর্শক হিসেবে যেতেই পারি।’’ জ্যোতিপ্রিয় অবশ্য বলেন, ‘‘এটা করা যায় না। কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছি।’’