জগন্নাথ সরকার। ফাইল চিত্র।
উপনির্বাচন যে হচ্ছে কোনও একটি আসনে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনই। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার শান্তিপুর বিধানসভা আসনেও জয়লাভ করায় সাংসদ এবং বিধায়ক পদের মধ্যে কোনও একটি তাঁকে ছাড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে রানাঘাট লোকসভা না শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র, উপনির্বাচন কোনটিতে হবে তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই বিধানসভায় বিধায়কদের শপথ গ্রহণের নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে শপথ নিলেন না জগন্নাথ। তাঁর অবশ্য দাবি, শারিরীক সমস্যার কারণেই সে দিন যেতে পারেননি।
দুই বছর আগের লোকসভা ভোটে ব্যাপক মার্জিনে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে জেতে বিজেপি। মার্জিন ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার। সেই সাংসদ জগন্নাথ সরকারকেই এ বার শান্তিপুর বিধানসভা আসনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। সেখানেও জিতেছেন তিনি। এ বার বিধায়ক এবং সাংসদ পদের মধ্যে যে কোনও একটি তাঁকে ছাড়তে হবে। আগের থেকে মার্জিন অনেকটা কমলেও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে নবদ্বীপ ছাড়া সবগুলিতেই জিতেছে বিজেপি। লোকসভার ফলেও এগিয়ে আছে তারা। এই এলাকায় এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে তৃণমূল। কিন্তু লোকসভার ফলে বিজেপির চিন্তা বাড়াতে পারে ভোটের হার।
লোকসভা ভোটে রানাঘাট আসনে প্রায় ৫২.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন জগন্নাথ। তৃণমূলের ভোট ছিল সে বারে প্রায় ৩৭ শতাংশ। এ বারে রানাঘাট লোকসভা এলাকায় ছয়টি বিধানসভায় জিতলেও তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের হার কমে দাড়িয়েছে ৫০.৪০ শতাংশ। আবার তৃণমূলের ক্ষেত্রে তা দাড়িয়েছে প্রায় ৪১.১৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের নিরিখে রানাঘাট লোকসভায় বিজেপি এগিয়ে আছে প্রায় ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ভোটে। যা আগের লোকসভা ভোটের থেকে অনেকটাই কম। ফলে ব্যাপক জয় হলেও এখানে তাঁদের ভোটের হ্রাস এবং তৃণমূলের ভোটবৃদ্ধি চিন্তায় রাখবে বিজেপিকে।
আবার শান্তিপুর বিধানসভার ক্ষেত্রেও বিজেপির ভোট কমেছে অনেকটাই। লোকসভা ভোটের প্রাপ্ত ৫৩.৭৩ শতাংশ নেমে এসেছে ৪৯.৯৪ শতাংশে। তৃণমূল সেখানে ৩৭ থেকে উঠে এসেছে ৪২.৭২ শতাংশে। তবে এখনও রানাঘাট লোকসভা এলাকায় তাদের এগিয়ে থাকা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। এ ক্ষেত্রে তাই কোন আসনের জন্য উপনির্বাচনে যাবে তারা সেটাই এখন প্রশ্ন। জগন্নাথের অবশ্য দাবি, “এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দল নেবে। এই সমস্ত এলাকায় আমরা নিরঙ্কুশ ভাবে জয়ের ক্ষমতা রাখি। লোকসভা ভোটের পরে এ বারের বিধানসভা ভোটেও তা প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।”
কিন্তু তিনি এ বারে বিধায়ক হিসাবে শপথ নিলেন না কেন? যেখানে শুক্রবারও শান্তিপুরে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করেছেন। তবে যাননি বিধানসভায়। সেটা কি বিধায়ক পদ ছাড়ারই ইঙ্গিত? জগন্নাথের দাবি, “শিরদাঁড়ার সমস্যা দেখা দেওয়ায় দূরে যাতায়াত করতে পারছি না। কাছাকাছি এলাকায় যেখানে যাওয়া সুবিধা সেখানে যাচ্ছি। আর শপথ পরেও নিতে পারব।”
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায়ের দাবি, “এই এলাকায় আমাদের ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানেই উপনির্বাচন হোক না কেন, এ বার আমরাই জিতব।”