ফাইল চিত্র।
আইএসএফের প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি জানিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা করিয়েছে সিপিএম। অথচ ওই দিনেই আইএসএফ প্রার্থী অনুপ মণ্ডলও মনোনয়ন জমা করেছেন। উল্টে তাঁর অভিযোগ, সিপিএম তাঁকে নানা ভাবে বিভ্রান্ত করেছে।
বিজেপি যোগের অভিযোগ তুলে চাপড়ার আইএসএফ প্রার্থীকে নিয়ে সিপিএম আপত্তি জানিয়ে এসেছে প্রথম থেকেই। কৃষ্ণগঞ্জে আইএসএফ প্রার্থীকে নিয়েও তাদের একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। আর এই দুই আসন নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে জটিলতা। দু’টি ক্ষেত্রেই আইএসএফ প্রার্থীকে ঘিরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সিপিএমের টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের আইএসএফ প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না জানিয়ে মঙ্গলবার ডিওয়াইএফ নেত্রী ঝুনু বৈদ্যকে দিয়ে দলের প্রতীকে মনোনয়ন জমা করায় সিপিএম। ওই দিনই আবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আসেন আইএসএফ প্রার্থী অনুপ। তাঁর অভিযোগ, প্রথম থেকেই তিনি সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসেছেন, কিন্তু সিপিএম তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে। তাঁকে তারা নানা ভাবে ঘুরিয়েছে আর মানুষকে বলেছে যে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনুপের কথায়, “সিপিএম আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি প্রথম থেকেই ওদের নেতাদের কাছে গিয়েছি। যোগাযোগ করেছি।”
চাপড়ার সিপিএম নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, অনুপ কোনও দিনই তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তা ছাড়া অনুপের সঙ্গে বিজেপির যোগ আছে। তাঁর বাড়ি বগুলা এলাকায়, সেখানে তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ২০১৮ সালে বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁকে মানতে না পারার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। অনুপ বর্তমানে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের অন্যতম শরিক ‘নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে যুক্ত। এই দল থেকেই তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বলে অনুপের দাবি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বুধবার বলেন, “ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিজেপির সক্রিয় যোগাযোগ আছে। আর রাজ্য বামফ্রন্ট থেকেও তো বলা হয়নি যে কৃষ্ণগঞ্জ আইএসএফ-কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
তবে সিপিএমের এই অবস্থান মানতে পারছেন না মোর্চার শরিক কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। দলের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি শঙ্কর সরকার বলছেন, “এ ক্ষেত্রে দল যা নির্দেশ দেবে সেটাই মেনে চলব। কিন্তু সিপিএমের জোটধর্ম মেনে চলা উচিত ছিল। ২০১৬ সালে ওরা আমাদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল।”
চাপড়া অবশ্য আইএসএফকে ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম। সেখানে কাঞ্চন মৈত্রকে প্রার্থী করেছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল। কাঞ্চন এর আগে চাপড়া ও শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিজেপির পুরনো যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম প্রথম থেকেই তাঁর প্রার্থিপদ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। কংগ্রেসের একটা অংশও প্রবল ভাবে বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে। প্রার্থী বদল না হওয়ায় এই অংশটি পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। কংগ্রেসের একটা অংশ কাঞ্চনের হয়ে লড়াইয়ে শামিল হতে রাজি হয়েছে।
কিন্তু চাপড়ার আইএসএফ নেতৃত্ব কাঞ্চনের প্রার্থিপদ বাতিল করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছেন। এই নিয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। আপাতত তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। বুধবার কাঞ্চন মনোনয়ন জমা দিলেও তাঁর পাশে দেখা যায়নি চাপড়ার আইএসএফ নেতৃত্বকে। দলের চাপড়া ব্লক কমিটির আহ্বায়ক ফরজ আলি মোল্লা বলেন, “প্রচণ্ড গরম পড়ে যাওয়ায় মনোনয়ন জমার সময়ে থাকতে পারিনি।” পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব ১ এপ্রিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলেছেন। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি।”সিপিএমও কাঞ্চনকে সরানোর জন্য মোর্চার ভিতরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। শেষ পর্যন্ত যদি আইএসএফ কাঞ্চনকে না সরায় তা হলে প্রয়োজনে তারা ‘বিকল্প রাস্তার’ সন্ধান করতে পারে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি। সিপিএমের সুমিত দে বলছেন, “চাপড়া কেন্দ্র নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। আমরা এখনও বলছি, এই কেন্দ্রের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থী চাই।” যদিও প্রার্থী পরিবর্তন খুব একটা সহজ হবে না। কারণ ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট যে ক’টি দল ও সংগঠন নিয়ে গঠিত তার অন্যতম ‘জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস’। চাপড়া আসনটি তাদের দেওয়া হয়েছে এবং কাঞ্চন ওই দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। ফলে আব্বাস সিদ্দিকীরাও তাঁকে সরে যাওয়ার জন্য সে ভাবে জোর করতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। মনোনয়ন জমা করে কাঞ্চনের দাবি, “কে কী বলছেন জানি না। তবে চাপড়ার মানুষ আমার পাশে আছে।”