দুর্গাপুরে আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে ২৪ ঘণ্টা আগেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায়। রবিবার সেখানে এসেই তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ ‘বহিরাগত’ তকমা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিলেন। পাশাপাশি, জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতা পূর্ণশশী রায়কে প্রচারে নামার আহ্বান জানালেন ওই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী হরেরাম সিংহ।
এ দিন সায়নী বার্নপুরে এসে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অনেকেই বহিরাগত বলছেন। এতে কিছু যায় আসে না।’’ আগামী মঙ্গলবার তিনি বার্নপুরে কর্মিসভা করবেন বলেও জানিয়েছেন। শুক্রবার দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল নেতা লক্ষ্মণ ঠাকুরের অনুগামীরা রাস্তায় নেমে সরব হয়েছিলেন। বার্নপুরের ত্রিবেণী মোড়ে মিছিল করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম না করে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন ওই এলাকারই শিক্ষক-নেতা অশোক রুদ্রও। স্থানীয় আপার রোড লাগোয়া একটি ক্লাব চত্বরে আয়োজিত ‘পরিচিতি অনুষ্ঠানে’ যোগ দিতে এসে সায়নীর ওই মন্তব্য আদতে এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া বলেই মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। তবে এর পাশাপাশি, সায়নীর সংযোজন: ‘‘তৃণমূলের সবাই
একই আছেন।’’
যদিও, তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সায়নী ‘এক থাকার বার্তা’ দিলেও এ দিনের পরিচিতি অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি লক্ষ্মণবাবু, অশোকবাবু এবং তাঁদের অনুগামী বলে দলের অন্দরে পরিচিতদের। ওই দুই নেতার সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিনের কর্মসূচিতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে প্রার্থীর সঙ্গে নিজস্বী তোলার ‘হিড়িক’ দেখা যায়। মূল অনুষ্ঠানটি ঠিক ভাবে হয়নি বলেই দাবি।
এ দিন আসানসোলে আসার আগে দুর্গাপুরে সায়নী দেখা করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। সায়নী দুপুরে জেকে নগর কালী মন্দিরে ঢুকে প্রণাম করে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে এলাকা পরিক্রমা করেন। আইএনটিটিইউসি নেতা নির্মল পাল জানান, এ দিন সকাল ১১টায় মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে তাঁদের সংগঠনের কার্যালয়ে সায়নী এসেছিলেন। তাঁকে সংবর্ধনাও জানানো হয়।
এ দিকে, জামুড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থী হরেরাম সিংহ এবং অণ্ডালে রানিগঞ্জের প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাণ্ডবেশ্বরের প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এলাকায় একটি প্রচার-মিছিল করেন। বিকেলে হরেরামবাবু নিঘায় হিন্দিভাষীদের সম্মেলনে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে, শনিবারই জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতা পূর্ণশশী রায় আসানসোলের পুর-প্রশাসকমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে হরেরামবাবুর আহ্বান, ‘‘উনি আমাদের পুরনো নেতা। আমি চাই, তিনি দলের হয়ে প্রচারে নামুন।” যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া
মেলেনি পূর্ণশশীবাবুর।
তবে এ দিন কলকাতায় দলের ব্রিগেড সমাবেশ থাকায় জেলায় প্রচার চালানো হয়নি বলে জানান বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তবে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল প্রার্থীরা যত খুশি প্রচার করুন। প্রচারে নেমেই ওঁরা টের পাবেন, মানুষ ওঁদের সঙ্গে নেই।’’ সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের দলের কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন জেলায় বাড়ি-বাড়ি প্রচার চালিয়েছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের কর্মীরা বুঝতে পারছেন, মানুষ বিকল্প হিসেবে আমাদেরই চাইছেন।’’ যদিও, সিপিএম ও বিজেপির দাবিকে আমল দিতে চাননি তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন।