দিন কয়েক আগে হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলই । —নিজস্ব চিত্র
ভোটযুদ্ধ শেষে বাড়ির অষ্টম প্রহর হরিনাম সংকীর্তনে মন দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। পদ্ম-প্রার্থী আবার ছুটছেন রাম নবমীর প্রস্তুতিতে। আর বাম প্রার্থীর সময় কাটছে বাড়িতেই। ছবিটা ঘাটালের।
ভোটের পরদিন গত ২ এপ্রিল কয়েক ঘণ্টা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন ঘাটালের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলই। সোমবার থেকে তাঁর বাড়িতে অষ্টম প্রহর শুরু হয়। শেষ হয় মঙ্গলবার। ওই দু’দিন তৃণমূল প্রার্থীর মন ছিল কীর্তনেই। এ বার অবশ্য প্রথম নয়, কয়েক বছর ধরেই এই অনুষ্ঠান হচ্ছে তাঁর বাড়িতে। ভোটের পরে তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক পার্টি অফিসে ভিড় পাতলা হয়ে গেলেও শঙ্করের মূলগ্রামের বাড়িতে ঠাসা ভিড়। সংকীর্তন অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরে দলীয় বৈঠকে মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন তিনি। নিয়ম করে ঘাটাল কলেজের স্ট্রং রুমে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা কখন পৌঁছোল, তাঁদের খাওয়া হয়েছে কি না— সব কিছুরই খোঁজ নিচ্ছেন। শঙ্করের কথায়, ‘‘ফল বেরোতে বহু সময় বাকি। বাইরে কোথাও প্রচারের জন্য সেভাবে ডাক আসেনি। অনেকটাই হাল্কা মেজাজে আছি। কর্মীদের সঙ্গেই সময় কেটে যাচ্ছে।”
ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী শীতল কপাট ভোটের প্রচারে বেরিয়ে ‘আক্রান্ত’ হয়েছিলেন। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই ঘুরেছেন তিনি। ভোটের পরের দিন বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। তবে সেটা ওই একদিনই। তারপর থেকেই দৌড়ঝাঁপ চলছে। সামনেই রামনবমী। ঘাটালে এ বার ধুমধাম করে রামনবমী পালন করবে গেরুয়া শিবির। সকাল হলেই দলীয় কর্মীর বাইকে চড়ে বেরিয়ে পড়ছেন শীতল। যাচ্ছেন দলীয় অফিসে। কর্মীদের সঙ্গে বসে ভোটের তালিকা ধরে হিসেব কষছেন। স্ট্রং রুম পাহারায় থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। শীতল বলেন, “ভোট মিটলেও আমাদের কর্মীদের কোনও ক্লান্তি নেই। সবাই রাম নবমী নিয়ে ব্যস্ত।” এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী কমল দোলই পেশায় স্কুল শিক্ষক। এখন স্কুল বন্ধ। তাই সকাল-সন্ধ্যায় নিয়ম করে দলের কার্যালয়ে বসছেন তিনি। তবে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর থেকে তাঁর ব্যস্ততা তুলনায় কম। ‘‘ভোটের চাপ তো এখন আর নেই। স্কুলও ছুটি। এখন বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছি। পার্টি অফিসেও যাচ্ছি”— বললেন কমল।
রামনবমীর প্রস্তুতি বৈঠকে বিজেপি প্রার্থী শীতল।
রাজ্যে ভোট এ বার আট দফায়। ফল সেই ২ মে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও ঘটনা ঘটছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “এ বারের ভোট নানা কারণেই খুব আগ্রহের হয়ে উঠেছে। কর্মীদের উৎসাহও বেশি। দেরি থাকলেও তাঁরা গণনার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।” ঘাটাল শহর তৃণমূল সভাপতি অরুণ মণ্ডল এবং বিজেপির ঘাটাল নগর মণ্ডলের সভাপতি অভিজিৎ অধিকারীও জানালেন, গণনায় যাঁরা থাকবেন সেই কর্মীদের ডাকা হচ্ছে। ভোটের ফলের জন্য তর সইছে না আমজনতারও। ঘাটাল শহরের কুশপাতার বাসিন্দা পূবালি মান্না নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘বাড়ির বাচ্চারাও পড়াশোনা ছেড়ে টিভিতে ভোটের খবর দেখছে। ফল না বেরোনো পর্যন্ত এটাই চলবে।’’
দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী কমল।
ফল বেরনোর পরে কী হবে?
ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা সাহিত্যিক রামরঞ্জন রায় মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যেই জিতুন, ঘাটালের পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দিলে ভাল হয়। শহরের সার্বিক উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য পদক্ষেপ করা জরুরি।’’