সিঙ্গুরের জনসভায় মমতা। নিজস্ব চিত্র।
সিঙ্গুরে জনসভায় বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ২০১৬ সালে জমি রক্ষা আন্দোলনের এই কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে সময় তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আসনটি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তৃণমূলনেত্রীর ইচ্ছাপূরণ হয়নি। তৃণমূলের সভার পরেই সিঙ্গুরের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অভিযোগ করলেন, মমতা মিথ্যা কথা বলছেন।
নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনে তাঁর সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীর মতোই সিঙ্গুরের সংগ্রামে মমতার সঙ্গী রবীন্দ্রনাথও এখন বিজেপি-তে। সিঙ্গুর বিধানসভায় পদ্ম-প্রতীকে প্রার্থীও হয়েছেন তিনি। কিন্তু শুভেন্দুর মতো রবীন্দ্রনাথকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘গদ্দার’, ‘মীরজাফর’ বলেননি তৃণমূলনেত্রী। বুধবার ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্নার সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় মমতার মন্তব্য, ‘‘ভেবে পাই না মাস্টারমশাই (রবীন্দ্রনাথ) কী করে বিজেপির হয়ে দাঁড়ান!’’
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘মাস্টারমশাইকে আমি সম্মান জানাই। তাঁর বয়সটাকে সম্মান জানাই। আমি তো এত দিন তাঁকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছি। চার বার জিতিয়েছি। দু’বার আমাদের সময়েই। আমি নিজে বলেছিলাম, ‘মাস্টারমশাই আপনি আমাদের সকলের থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ। তাই আপনি আমাদের অ্যাডভাইস করুন। আপনাকে কোনও একটা উপদেশ কমিটির চেয়ারম্যান বা কিছু করে দেব। সেখান থেকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। আর আগামী পাঁচ বছরের জন্য বেচাকে (বেচারাম) এখানে কাজ করতে দিন। বেচা এখানকার লোকাল ছেলে। হরিপালে বিধায়ক ছিল। তাই ওখানে ওর বউকে দাঁড় করিয়েছি। মাস্টারমশাইকে আমি আজও সম্মান জানাই।’’
এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘আমার কোনও কিছু বলার নেই। কিন্তু আপনারা জানেন, বেচাও এ কথা জানে, আমি বাজে কথা কম বলি। গত বার সিঙ্গুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল। কারণ আন্দোলনের জায়গা বলে। বেচাকে বলেছিলাম, ‘মাস্টারমশাইকে বোঝা, যদি এখান থেকে না দাঁড়ান অন্য কোথাও দাঁড়ান, তা হলে আমি সিঙ্গুর থেকে দাঁড়াতে পারি’। বেচা বলল, ‘মাস্টারমশাই শুনবেন না’। আমি বললাম, ‘ঠিক আছে’। মমতার দাবি, নন্দীগ্রামের মতো সিঙ্গুর নিয়েও আবেগ রয়েছে তাঁর। সিঙ্গুরের কৃষিজমি বাঁচাতে তিনি, ২৬ দিন আমরণ অনশন করেছেন। বিডিও অফিসে মার খেয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাঁকে। সেই আবেগ থেকেই দেড় দশক আগেকার জমি রক্ষা আন্দোলনের সেই ইতিহাসকে পাঠ্যসূচিতে ঠাঁই দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বুধবারের সভায় সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের কর্মী মহাদেব দাস, মানিক দাসদের নাম করেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের মানুষের সঙ্গে আমার পরিবারের পুরনো সম্পর্ক। আন্দোলনের সময় কেউ নারকেল-মুড়ি কেউ কাঁচালঙ্কা এনে দিতেন। সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরানোর আন্দোলন করেছিলাম। আর সেই জমি আমি ফিরিয়ে দিয়েছি।’’ সিঙ্গুরের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে, তারও তালিকা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামকে তিনি ভুলতে পারেননি বলেও জানান। সেই সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ বেচারামকে সমর্থনের আবেদন জানিয়ে মমতার বার্তা, ‘‘আপনি বাড়িতে থাকুন। নিজের সম্মান বাঁচান। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর বেচারামকে জয়ী হতে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন আপনার সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ করেছে। তাই ওকে (বেচারাম) আশীর্বাদ করুন।’’
বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘বেচারামকে আমি আশীর্বাদ করব না। ও দু’বারের বিধায়ক হয়ে ওর পরিবারের নামে-বেনামে যা সম্পত্তি করেছে, সেটা চুরি ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
সত্যিই কি তিনি মমতাকে নিজের আসন ছাড়তে রাজি হননি?
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, ‘‘উনি মিথ্যা কথা বলছেন। সাম্প্রতিককালে দু’বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এক বার যখন আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়কের দাবি, তার আগে একবার যখন সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, মহাদেব দাসকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে গোবিন্দ ধাড়াকে ব্লক সভাপতি করা কোনমতেই মেনে নেবেন না। সে সময় একবার মমতা ফোন করেছিলেন তাঁকে। তখন ভোটে দাঁড়ানোর কোনও প্রসঙ্গে ওঠেনি। বিধানসভা ভোটে নির্বাচনে সিঙ্গুরের মানুষ তৃণমূলকে মানুষ জবাব দেবে বলে দাবি নব্বই ছুঁই ছুঁই বিজেপি প্রার্থীর।