নিয়মবিরুদ্ধ: হাওড়ার বেনারস রোডের একটি স্কুলের দেওয়ালে এখনও লাগানো রাজনৈতিক দলের পোস্টার ও ব্যানার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রাজ্যে ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। বলবৎ রয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। সেই বিধি অনুযায়ী, ভোট ঘোষণার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুন-হোর্ডিং খুলে ফেলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ, হাওড়া শহরে এক দিকে জেলা নির্বাচনী দফতরের তরফে বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি থেকে রাজনৈতিক দলের লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন খুলে ফেলা হচ্ছে। অন্য দিকে, সেই ফেস্টুন-ব্যানার এবং দলীয় নেতা-নেত্রীদের ছবি আবার লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রাস্তা এবং অলিগলিতে। বাদ যাচ্ছে না স্কুলের দেওয়ালও। এ নিয়ে কার্যত চোর-পুলিশ খেলা শুরু হয়েছে দু’পক্ষে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, এর আগে কোনও নির্বাচনে এই হারে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি। ইতিমধ্যেই তাদের তরফে পুলিশের কাছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটের দিন ঘোষণার পরে সরকারি সম্পত্তি, যেমন সরকারি অফিসের দেওয়াল, বাতিস্তম্ভ প্রভৃতি জায়গায় কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানার, পোস্টার এবং ফেস্টুন থাকতে পারবে না। এমনকি দেওয়াল লিখনের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দেওয়ালের মালিকের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। জেলার নির্বাচনী আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রতি বার ভোটের আগেই এই বিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায়। বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি থেকে ব্যানার-হোর্ডিং খুলে দেয় জেলার মডেল কোড অব কন্ডাক্ট (এমসিসি) টিম। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে সেই প্রবণতা কার্যত অন্য বছরকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
হাওড়া জেলার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানান, এখনও পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি দেওয়াল মোছা হয়েছে ১০৫টি। পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে ২৯৯৬টি। ব্যানার খোলা হয়েছে ৫২৪৫টি, ফ্লেক্স-ফেস্টুন খোলা হয়েছে ৩৯,৬৬৭টি। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ব্যানার-ফেস্টুন খোলার পরেও দেখা যাচ্ছে, সেগুলি ফের লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি সম্পত্তিতে। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রশাসনের তরফে দল পাঠিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন খোলা হচ্ছে। কিন্তু দু’-এক দিন পরেই সেগুলি আবার যথাস্থানে ফিরে আসছে। বিধি না মানার প্রবণতা এ বার সব দলেই বেশি।’’
কিন্তু বিধি না মানার কারণ কী? তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদরের সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তিতে ব্যানার, ফেস্টুন লাগাতে কর্মীদের বারণ করা হয়েছে। যদি কেউ কোথাও এমন কিছু লাগিয়ে থাকেন, তা দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে।’’ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির হাওড়া জেলার (সদর) সভাপতি সুরজিৎ সাহার বক্তব্য, ‘‘দলের কিছু অত্যুৎসাহী দলের লোকজন এটা করছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকে কর্মী-সমর্থকদের আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলতে বলেছি। এ নিয়ে ফের নির্দেশ দেওয়া হবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “নির্বাচনী বিধি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলিকে আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল নির্বাচন কমিশনের। ঠিক মতো প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় অনেকেই বিধি সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেন না। ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অজানতে বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তবে কেউ এ ভাবে বিধি ভাঙলে কমিশনের উচিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।”