প্রতীকী ছবি।
প্রথম দফার বিধানসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যহত কাঁথিতে। তাঁদের এক দলীয় কর্মীকে শাসকদল পিটিয়ে মেরেছে বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করছে বিজেপি। আবার নিহত ব্যক্তি তাঁদের দলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি থানায় অভিযোগ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাউলি থেকে জন্মেঞ্জয় দোলুই (৩৫) নামে ওই ব্যক্তিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকেরা। জন্মেঞ্জয়ের বাড়ি কাঁথি-৩ এবং এগরা-২ ব্লকের সীমানায় বাথুয়াড়ি পঞ্চায়েতের উত্তর পদ্মা গ্রামে। এলাকাটি উত্তর কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এদিন সকাল ৯টা নাগাদ মশাগা সেতুর কাছে একটি দোকানে বসেছিলেন ওই ব্যক্তি।
অভিযোগ, সে সময় শাসকদল তৃণমূলের লোকেরা গাড়িতে করে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় এবং মারধর করে তিরিশ বিঘার কাছে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দেয়। খবর পেয়ে বিজেপি কর্মীরা জন্মেঞ্জয়কে উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এক সময় সিপিএমের হয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন জন্মেঞ্জয় ওরে চাঁদু। তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় কোণঠাসা হয়েছিলেন। তবে এবার বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে এলাকায় প্রচার করেতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিজেপি’র দাবি, জন্মেঞ্জয় তাঁদের দলের কর্মী।
গত ২৭ মার্চ উত্তর কাঁথি বিধানসভায় ভোটগ্রহণ ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় ব্লক তৃণমূল সভাপতি নন্দদুলাল মাইতিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি’র বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে জন্মেঞ্জয়ের নাম করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন জন্মেঞ্জয়। এর পরেই এ দিনের ঘটনা। এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই দাবি করেছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির জেলা (কাঁথি) সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ বেজের নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী জন্মেঞ্জয়কে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করেছে। এই ঘটনার পিছনে পুলিশেরও মদত রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে জেলাব্যাপী পথ অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হবে।’’
এদিকে, জন্মেঞ্জয়কে নিয়ে বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএমের পক্ষ থেকে ১১ জনের বিরুদ্ধে মারিশদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কালীপদ শীট বলেন, ‘‘জন্মেঞ্জয় বরাবর আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। তার জন্যই বিজেপি এবং তৃণমূলের পূর্ব আক্রোশ ছিল। এদিন তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’’
মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে আটকও করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গিয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিজেপি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই বিধানসভা এলাকার তৃণমূল প্রার্থী তরুণ জানার দাবি, ‘‘আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে টাকা-পয়সার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। তার জেরেই খুন বলে স্থানীয়ভাবে শুনেছি। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’