West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: গড় রক্ষা করতে সর্বত্র ছুটে চলেছেন মনোজ

বহরমপুর বিধানসভার মানুষের কাছে বিরোধীরা ইদানীং উন্নয়নের প্রশ্নে কংগ্রেসকে বিঁধলেও অধীর কংগ্রেসের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস এখনও অটুট।

Advertisement

বিদ্যুৎ মৈত্র

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের খোঁজ দেশ জুড়ে। জেলায় করোনাক্রান্তের সংখ্যাও সম্প্রতি দৈনিক পাঁচশো পেরিয়েছে। সেই সময় পনেরো বছর ধরে চাষ করা জমি আরও পাঁচ বছর ধরে রাখার আকুল প্রচেষ্টায় এবেলা ওবেলা শহর থেকে গ্রাম চষে ফেলেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী।

Advertisement

এমনিতে কোনও ব্যক্তিগত শত্রুর খোঁজ মেলেনি তাঁর ঠিকুজিতে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে মনোজের প্রতিপক্ষরা কোভিড পরিস্থিতিকে তোয়াক্কা না করে তাঁর এই ছুটে চলার জন্য বিজেপিকে দুয়ো দিচ্ছেন। রাজ্য জুড়ে গেরুয়া বিজ্ঞাপনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বহরমপুরও, সেই প্রভাবই মনোজ চক্রবর্তীর গড়ে অক্সিজেন ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ছুটছেন বিধানসভায় কংগ্রেসের এই মুখ্য সচেতক, দাবি বিজেপির। যদিও তাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না মনোজ, তিনি ব্যস্ত ‘কত বেশি ভোটে জিতে আসা যায়’ তারই হিসেব নিকেষ নিয়ে।

কারণ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুর বিধানসভাই কংগ্রেসকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল। সেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বহরমপুর বিধানসভায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৯০টি ভোট পেয়েছিলেন সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। যা ওই লোকসভার অন্য বিধানসভাগুলির তুলনায় সর্বোচ্চ। তাই বহরমপুরকে আরও আগলে রাখতেই মনোজ প্রতিটা মানুষের দরজায় দরজায় হাঁটছেন নিয়মিত, পালটা দাবি জেলা কংগ্রেসের।

Advertisement

বহরমপুর পুর এলাকা সহ বহরমপুর ঘেঁষা ভাকুড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েত, মণীন্দ্রনগর, হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েত আর খানিক দূরের গুরুদাসপুর, দৌলতাবাদ পঞ্চায়েত নিয়ে বহরমপুর বিধানসভা। সেই বিধানসভা এলাকায় সংযুক্ত মোর্চা কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীকেই মনোনীত করেছে একুশের ভোট যুদ্ধের সৈনিক হিসাবে।

১৯৫১ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৭ বার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে বহরমপুরে। তার মধ্যে ১২ বার কংগ্রেস এই আসনে জয় লাভ করেছে, সে কথা ভোট ইতিহাসে লেখা আছে। আরএসপি’র দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তিনবার আর সিপিএমের সনৎ রাহা দু’বার বিধায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এই কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে। তাই এই বিধানসভা ১৯৫১ সালের বিজয়কুমার ঘোষের আমল থেকেই কংগ্রেসের ঘর, তখনও অধীর রঞ্জন চৌধুরী ‘রবিনহুড’ হয়ে ওঠেননি। মাঝে ১৯৭৭ সাল থেকে হ্যাটট্রিক করা আরএসপি’র দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ফের বহরমপুর ছিনিয়ে নেন কংগ্রেসের শঙ্কর দাস পাল ১৯৯১তে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই আসন এখনও কংগ্রেসের।

তারই ফাঁকে ২০০৬ সালে দলের হাইকমান্ড ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই বহরমপুরে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন শিক্ষক মনোজ চক্রবর্তীকে দাঁড় করিয়ে নিজের শহরেই কংগ্রেসকে হারিয়ে দেওয়ার নজির তৈরি করেছিলেন যে অধীর, তিনি আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতা। আর তারপর থেকে কংগ্রেসের পাশাপাশি বহরমপুরও মনোজের নিশ্চিত আসন। তাই রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসন কাটানোর পর জোড়াফুলের ১০ বছর শেষে বহরমপুর বিধানসভার মানুষের কাছে বিরোধীরা ইদানীং উন্নয়নের প্রশ্নে কংগ্রেসকে বিঁধলেও অধীর কংগ্রেসের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস এখনও অটুট।

যদিও একুশের ভোটে সেই বিশ্বাসে নাগাড়ে শ্লেষ হানছেন বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ওরফে কাঞ্চন মৈত্র, যাঁরা ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের প্রাক্তনী। তাঁদের খোঁচা মূলত এখনও অধরা কংগ্রেস ঘোষিত চুঁয়াপুর ও পঞ্চাননতলা উড়ালপুল, নশিপুর রেল সেতুতে। আর রাজ্য সরকারের অসহযোগিতাতেই যে ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করা যায়নি সে দাবি বারংবার আউড়ে কংগ্রেসের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বেঁধে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। শুধু তাই নয় বহরমপুর বিধানসভার বিধায়ককে লকডাউনে কাছে না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলই নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি পথসভায়। সে কথাও ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মনোজ।

তাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকা কোথায় খরচ হয়েছে বলে জানতে চাইলে ধরিয়ে দিচ্ছেন সরকারি তথ্য। তথ্য অনুযায়ী বিধায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীরই।

সেই রিপোর্ট কার্ড হাতে নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীদের খোঁচা দিয়ে মনোজ বলছেন, “আমার ছেলেটা যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় তখন তাঁকে কেউ বলে না ওই চোর মনোজের ব্যাটা যাচ্ছে। এটুকুই আমার শান্তি এটুকুই আমার প্রাপ্তি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement