প্রতীকী ছবি।
কৃষিনির্ভর এলাকায় এখনও তৈরি হল না বহুমুখী হিমঘর। কিসান মান্ডিও চালু হয়নি। পথঘাটের অবস্থা ভাল নয়। আর্সেনিমুক্ত পানীয় জল এখনও পৌঁছল না ঘরে ঘরে। নিকাশি বেহাল। তার উপরে আছে আমপানে টাকা নিয়ে দুর্নীতির নালিশ। এ সব অভিযোগ সামলেই ফের আর একবার ভোটের ময়দানে বিদায়ী বিধায়ক রহিমা মণ্ডল। গত বার থেকেই তাঁকে প্রার্থী করায় তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দল বার বার সামনে এসেছে। নিজেকে ‘কাছের মানুষ’ প্রমাণ করতে বনগাঁর আদি বাসিন্দা রহিমা কাউকেপাড়ায় একটি বুথে নিজের নাম তুলেছেন ভোটার তালিকায়। তাতেও অবশ্য গোষ্ঠী কোন্দল কমেনি গত পাঁচ বছরে। এ বার রহিমা ফের দলের টিকিট পাওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের অনেকে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
বাম আমলে বামেদের শক্তঘাঁটি ছিল দেগঙ্গা। ২০১৬ সালে সেখানে বামেরাই জোর টক্কর দিয়েছিল তৃণমূলের সঙ্গে। এ বার রাজ্যে আইএসএফ এবং কংগ্রেসকে নিয়ে বামেরা সংযুক্ত মোর্চা গঠন করলেও দেগঙ্গায় আইএসএফ এবং ফরওয়ার্ড ব্লক আলাদা মনোনয়ন জমা দিয়েছে। আইএসএফ প্রার্থী হয়েছেন করিম আলি। তিনি বলেন, ‘‘আমপানের পরে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। লকডাউনে মানুষ কাজ পাননি। আমি ওই সময়ে সকলের পাশে থেকেছি। মানুষ আমাকে চেয়েছেন, তাই প্রার্থী হয়েছি।’’ দেগঙ্গার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হাসানুজ্জাম চৌধুরী বলেন, ‘‘চাষির উন্নতির জন্য লড়াইয়ে একমাত্র বামেরাই এগিয়ে। দেগঙ্গার বামেরাই বহুমুখী হিমঘর করেছিল চাষিদের স্বার্থে। বর্তমান তৃণমূল সরকার তা আজও চালু না করে বুঝিয়ে দিয়েছে, চাষিদের উন্নতি তারা চায় না।’’
আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখানে প্রচারের হাওয়া গরম করছে বিজেপি। আমপানের পরবর্তী কয়েক মাস নানা আন্দোলন করেছে তারা। বিডিও দফতরে বিক্ষোভের সময়ে বিজেপি-তৃণমূল খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল। বিজেপি প্রার্থী কে কি বলেন? বিজেপি প্রার্থী দীপিকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেগঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। রোগী গেলেই রেফার লিখে দেওয়া হয়। আজও দমকল কেন্দ্র তৈরি হল না দেগঙ্গায়। বছরের বেশির ভাগ সময়ে টাকি রোড ভাঙাচোরা থাকে। নুরনগর পঞ্চায়েতের সামনে থেকে সোহায় যাওয়ার দেড় কিলোমিটার রাস্তায় জমিজটের জন্য বাইপাসের কাজ থমকে আছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই জট কাটাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’’ রহিমার অবশ্য দাবি, এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে তাঁর আমলে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও মিটেছে বলে জানালেন তিনি। দলের সব পক্ষ তাঁর হয়ে প্রচারে নেমেছে বলে দাবি রহিমার। বিদায়ী বিধায়কের কথায়, ‘‘গ্রামীণ কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে, বাংলা আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন অনেকে, ২৬১টি বুথ এলাকায় বাতিস্তম্ভ হয়েছে, দু’টি শ্মশানঘাট তৈরি হয়েছে, পুরনো শ্মশানঘাট সংস্কার হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী প্রতীক্ষালয়, ৪টি অ্যাম্বুল্যান্স, ১০০টির বেশি পানীয় জলের গভীর নলকূপের পাশাপাশি দুয়ারে সরকার প্রকল্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়েছে, বিধবা ও বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে।’’ দমকল কেন্দ্রে গড়ে তোলার কাজ অগ্রগতির পথে বলে দাবি তাঁর। আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে অভিযোগকে ‘বিরোধীদের চক্রান্ত’ বলে আমল দিতে চাননি তিনি। এলাকাবাসীদের অনেকে জানালেন, আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় পরিস্রুত জল এখনও অমিল। চালু হল না কিসান মান্ডি। মুখ্যমন্ত্রী মধু হাব তৈরির কথা ঘোষণা করলেও তা হয়নি। পদ্মা খাল সংস্কার হলেও ফের কচুরিপানায় ভরে নিকাশি-সমস্যা হচ্ছে। ফি বর্ষায় কলসুর, চাকলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের দুর্দশা বাড়ে।