নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ পাঠক ও দেবদত্ত মাজি।
বাতানুকূল এসইউভি তখন ছুটছে লেডি ডাফরিন হাসপাতাল লাগোয়া স্কট লেনের দিকে। চালকের পাশের আসনে চৌরঙ্গি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। সবে রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড লাগোয়া গলিতে প্রচার সেরে বেরিয়েছেন। বললেন, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীন নয়, হাস্যকর। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব সময়ে এলাকার মানুষের পাশে থেকেছি। মানুষও তাই আমার সঙ্গে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। বিরোধী প্রার্থীদের আমিও চিনি না, এই কেন্দ্রের ভোটারেরাও চেনেন না।’’
বেলা ১২টা নাগাদ এস এন ব্যানার্জি রোডে জানবাজার এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছিলেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। তাঁর উক্তি, ‘‘মানুষের ঘরে ঘরে আমার মতো অন্য আর কোনও প্রার্থী পৌঁছননি। এলাকার বিধায়কের তো দেখাই মেলে না। বিজেপি প্রার্থীর পরিচিতিই নেই। পরিশ্রম করছি। জনতা ঠিক লোককেই এ বার বেছে নেবেন।’’
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে জেম সিনেমার পাশে নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে বিরোধীদের ‘চেনা মুখের’ কথা মেনে নিলেন বিজেপির দেবদত্ত মাজি। তবে একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘প্রচারের সময়ে অনেকেই বলছেন আমাকে তাঁরা চেনেন না। কিন্তু অন্য দলের লোকেদের ভাল করে চিনে গিয়েছেন। বুঝে গিয়েছেন, সেই দলের লোকেরা কী ভাবে দুর্নীতি, তোলাবাজি করে চলেছেন।’’
কলিন স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিটের মতো রাস্তায় পর পর উড়ছে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের পতাকা। ক্রিক রো-তে দেওয়াল লিখনে ‘ঘড়ির কাঁটা টিকটিক, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার গড়বে হ্যাটট্রিক’। জয়ের প্রশ্নে নয়নার জবাব, ‘‘সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। বিধায়ক তহবিলের টাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। রাস্তাই আমার বাড়ি, রাস্তাতেই ঘুরি। করোনার ভিড়ে মানুষের পাশে আমার মতো আর কেউ ছিলেন না।’’
ব্যাঙ্কশাল কোর্টের কাছে গার্স্টিন প্লেসের কার্যালয়ে সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থীর ‘নির্বাচনী পরিকল্পক’ অমিতাভ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘বিদায়ী বিধায়ক এক দিনের জন্যও চৌরঙ্গির কথা কোথাও বলেননি। ভোট ছাড়া দলের লোকেরাই তো ওঁর দেখা পান না। আর বিজেপি রাজনীতিতে শুধু ধর্ম মেশায়। আমাদের লড়াই ভাতের, কাজের, গরিব মানুষের স্বার্থের।’’
দেবদত্ত বলছেন, ‘‘৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, কংগ্রেসের প্রার্থীর ওই ওয়ার্ডের বাইরে কোনও জনসমর্থনই নেই। যাঁরা খেলা হবে বলে হল্লা করছেন, তাঁদের বাড়ির লোকেরাই জয় শ্রী রাম বলছেন। সংখ্যালঘু এলাকায় তেমন প্রচার করিনি ঠিকই। কিন্তু তাঁদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’’
নয়নার বক্তব্য, ‘‘সব জায়গায় প্রচারে ওঁরা যাবেনই বা কী করে? ওঁদের তো এখানে কোনও সংগঠনই নেই। আর ভোটে আবার ধর্ম কী? মানুষই আসল।’’
জানবাজারের রানি রাসমণি স্ট্রিটে বাড়ি দামোদর রায়ের। বললেন, ‘‘জন্ম থেকেই এখানে আছি। এলাকায় এখন ভালই কাজ হচ্ছে। আমার পরিজন, বন্ধুরা কী ভাবে জানি না, তবে যে দল কাজ করে, ভোট তো তাদেরই দেওয়া উচিত।’’