প্রতীকী ছবি।
দাঁড়িপাল্লায় তুল্যমূল্য বিচারে দু’টি বিষয়। প্রথমটি, এক অভিনেত্রীর করা কয়েক বছর আগের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে বিতর্ক। যে পোস্ট ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এক রাজনীতিক। দ্বিতীয়টি, ওই পোস্টের বিরোধিতায় এবং একটি টক-শোয়ে অভিনেত্রীর করা মন্তব্যের পাল্টা দিতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের লাগাতার কুরুচিকর মন্তব্য ও হুমকি।
বিচারের ফলাফল হিসেবে ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ জানিয়েছে, অন্তত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সহানুভূতি বেশি অভিনেত্রীর পক্ষেই। এক মহিলাকে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের লাগাতার কুরুচিকর মন্তব্য ভাল চোখে নেননি তাঁরা। অভিনেত্রীর বিতর্কিত পোস্টের বিরুদ্ধে আসা প্রতিক্রিয়ার চেয়ে এক মহিলার বিরুদ্ধে নেতার কুরুচিকর মন্তব্যের বিরোধিতায় জমা হওয়া প্রতিক্রিয়া বহু গুণ বেশি। অতএব, ভোটের ময়দানে ওই অভিনেত্রী হতেই পারেন ‘মহিলা মুখ’!
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ক্ষেত্রে এই সব বিষয় নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসা ‘জনতার রায়ের’ চুলচেরা বিশ্লেষণ চালিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কে কোথা থেকে লড়বেন, আর কে লড়বেন না, সেই সিদ্ধান্তকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে এই বিশ্লেষণ। অন্তত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেল সূত্রে তেমনটাই খবর। একাধিক ‘ডেটা অ্যানালিসিস টুল’-এর সাহায্যে কার্যত মেপে দেখা হয়েছে, কে, কোন বিষয়ে ‘লাইক’ পেয়েছেন। কার, কোন প্রসঙ্গে বেশি মন্তব্য এসেছে। কোন বক্তব্যই বা ‘শেয়ার’-এর সংখ্যায় মিলিয়ন, বিলিয়ন ছুঁয়ে ফেলেছে। বিজেপি-র আইটি সেলের এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেই এই অ্যানালিসিস টুলের কামাল দেখেছি আমরা। আমরা মজা করে বলি, ১৯-এ টুলে বসে ভোট হয়েছে।’’
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই এখন নিজস্ব তথ্যপ্রযুক্তি শাখা রয়েছে। সর্বভারতীয় দলগুলির কেন্দ্রীয় ভাবে তৈরি সেই শাখাগুলির পাশাপাশি কাজ করছে রাজ্য-ভিত্তিক আইটি শাখাও। প্রথমেই রাজ্যের জেলাগুলিকে বিভিন্ন জ়োনে ভাগ করে নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের ‘প্রোফাইল’ তৈরি করা হয়েছে। সোশ্যাল সাইটে প্রোফাইল ধরে ধরে এর পরে বোঝার চেষ্টা হয়, কে তাদের সমর্থক, কে বিরোধী। বিরোধী হলে ওই ব্যক্তি কোন বিষয়ে চিন্তিত, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়। একেই সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘প্যানিক সেক্টর’!
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তের মতে, ধরা যাক, কোনও একটি রাজনৈতিক দলের প্রচারের অন্যতম বিষয় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। এমনটা হতেই পারে, কোনও ব্যক্তি ওই দলকে পছন্দ করেন না। কিন্তু জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রশ্নে তিনি চিন্তিত। দাম কমানোর দাবি সংক্রান্ত পোস্টে সোশ্যাল সাইটে ‘লাইক’ও দিয়ে রেখেছেন। টুলে জ্বালানির দাম ‘মেটা কিওয়ার্ড’ লিখে সার্চ করলেই দেখিয়ে দেবে ওই ব্যক্তির ‘প্রোফাইল’। এর পরে ‘লাইক’-এর সূত্র ধরেই শুরু হবে ওই ব্যক্তিকে প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া। সোশ্যাল সাইটে জ্বালানির দাম কমানোর পোস্ট আগের চেয়ে আরও বেশি করে দেখতে পাবেন ওই ব্যবহারকারী। ওই ব্যক্তি যে এলাকার বাসিন্দা, সেখানকার ভোটপ্রার্থীর জ্বালানির দাম সংক্রান্ত মন্তব্যের ভিডিয়ো ঘুরে-ফিরে আসবে।
সন্দীপবাবু জানাচ্ছেন, বুটশুট, ওপেন টেক্সট, হটসুইট ইনসাইটসের মতো বহু ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ রয়েছে বাজারে। বহু সংস্থা নতুন পণ্য বাজারে আনার আগে ক্রেতার মন বুঝতে এই ধরনের ‘টুল’ ব্যবহার করে। ভোটের বাজারে এই ‘টুল’-এর মাধ্যমে মানুষের মতামত বুঝতে খরচ পড়ে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা। ভোটে জিততে মরিয়া দলগুলির কাছে এই খরচ তো নস্যি!