arpita ghosh

Bengal Polls: নাট্য শহরে জমে নিয়ন্ত্রণের ভয়

মরা আত্রেয়ীর জলে চাঁদের আলো চিকচিক করছে। সরোজরঞ্জন সেতুর উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন খই ছড়িয়ে দিয়েছে নদীর জলে।

Advertisement

নীহার বিশ্বাস 

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২১ ০৮:০৩
Share:

অভি-নেত্রী: নাটকের একটি দৃশ্যে অর্পিতা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

মরা আত্রেয়ীর জলে চাঁদের আলো চিকচিক করছে। সরোজরঞ্জন সেতুর উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন খই ছড়িয়ে দিয়েছে নদীর জলে। বসন্তের হালকা শীতল বাতাস সেই জলের উপর দিয়ে এসে কাচ নামানো গাড়ির ভিতরটাকে ঠান্ডা করে দিচ্ছে। ফাঁকা সুনসান রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে গাড়িটি। ভিতরে একদল অভিনেতা। যাবেন তপনের কাশমুলাই গ্রামে। খোলা মঞ্চে সেখানে দেখানো হবে ‘ছুনু মিঞার কিসসা’। গ্রামের মাঁচায় এইভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায়, দলের সদস্যরাই ভাবতে পারেননি। কিন্তু ছুনু মিঞার নজরে যখন গ্রামের ‘বদ’ প্রধান জব্দ হয়, সেই দৃশ্য দেখে গোটা গ্রামের দর্শকদের হাততালিতে সেই ভুল ভাঙে।

Advertisement

একাঙ্ক নাটকের জনক মন্মথ রায়ের বেড়ে ওঠার শহর বালুরঘাট। স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে সেখানে তাঁর হাত ধরে নাট্যচর্চার শুরু। তাঁরই ‘কারাগার’ নাটকটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই শহরের নাট্যচর্চার অবস্থা এখন বুকের উপরে বালির চর জমে ওঠা আত্রেয়ীর মতোই। নদী আছে, কিন্তু ঢেউ নেই। তেমনই নাটক আছে, কিন্তু ‘ধার’ নেই। বালুরঘাটের সমমন নাট্যদলের নির্দেশক ভবেন্দু ভট্টাচার্য আক্ষেপ করে বললেন, ‘‘নাটক শাসককে প্রশ্ন করে। আর শাসক চায় প্রশ্নহীন আনুগত্য। যাঁরা এই আনুগত্য দেখাতে পারেন, শাসক তাঁদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করে। কিন্তু এই মানসিকতা নিয়ে নাট্যচর্চা করলে থিয়েটারের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।’’ তাই শহরে ডজন খানেক দল থাকলেও সেভাবে থিয়েটার আর হয় না। মন্মথ রায়ের হাত ধরে হরিমাধব মুখোপাধ্যায় হয়ে বর্তমান প্রজন্মের নাট্যদল, নাট্য নির্দেশকরাও তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাই শহরে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র হলেও তার উদ্বোধন নিয়ে ‘রাজনীতি’ করার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে রাজ্যের শাসকদল। শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা হলে দেওয়া হয় না সরকারি অনুদান— এমন অভিযোগও শোনা যায়। ভোট বাজারে এ সব নিয়ে কথা উঠবেই।

কিন্তু এমন পক্ষপাতিত্ব, নাট্যদলের উপরে ‘নিয়ন্ত্রণ’ আশা করেননি নাট্যপ্রেমী মানুষরা। তাই যখন নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ বালুরঘাটের সাংসদ হয়েছিলেন, শহরের নাট্যদলগুলি উন্নতির স্বপ্ন দেখেছিল। অর্পিতা উদ্যোগীও হন। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার আদলে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্ল্যাকবক্স সম্বলিত নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরিও হয়। সরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি দলকে অনুদান ‘পাইয়ে দেওয়ার’ ব্যবস্থাও করেন।

Advertisement

এত কিছুর পরেও শেষ অবধি নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রে হয়েছে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল। আজ পর্যন্ত কোনও নাটক হয়নি সেখানে। শহরের মধ্যে থাকা মন্মথ নাট্যচর্চা কেন্দ্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতের কাজের প্রশিক্ষণ বেশি হয়। রবীন্দ্রভবন এক দশক ধরে বন্ধ। তাই নাটকের শো করতে ভরসা নাট্যতীর্থ, নাট্যমন্দির বা ত্রিতীর্থের থিয়েটার হল। অর্পিতা নিজেও বলেন, ‘‘আরও কাজ করাই যেত। কিছুটা হয়েছে। বাকিটা ভোটের পরে করব।’’ কিন্তু কোথাও যেন একটা আশঙ্কা নাট্যদলগুলিতে জাঁকিয়ে বসেছে— প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করলে শো করা যাবে তো?

ভোর হয়ে আসছে, নাটক শেষ করে কাশমুলাই থেকে ফিরছে গাড়ি। সরোজরঞ্জন সেতুতে ওঠার মুখে হাওয়ায় উড়ছে একই খুঁটিতে বাঁধা জোড়াফুল-পদ্মফুল-কাস্তে-হাতুড়ির পতাকা। যা দেখে ‘ঘরকথা’ নাটকের সংলাপ মনে পড়ে ‘ছুনু মিঞা’র..‘‘জীবনে যে কত ধরনের ভয় আছে... ঘর, জঙ্গল লুট করার ভয়...রাতের অন্ধকারে ভারী বুটের আওয়াজের ভয়... ছেলে না মেয়ে প্রমাণ করার ভয়..।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement