ঘেরাও হয়ে রয়েছেন তনুশ্রী। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি বুথ পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশকে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার শ্যামপুরের কুমারগড় গ্রামে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের হাতে ঘেরাও হয়ে গেলেন এখানকার বিজেপি প্রার্থী, অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। ঘেরাও চলাকালীন বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে প্রার্থীকে বের করে আনে।
এ দিন এই গ্রামেরই বুথে ‘প্রক্সি’ ভোট দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তনুশ্রীর সঙ্গে তৃণমূলের বুথ এজেন্টের তুমুল বাকবিতণ্ডাও হয়। তনুশ্রীর অভিযোগ, তাঁকে কটূক্তি করেন তৃণমূল এজেন্ট। পুরো বিষয়টি তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন বলে তনুশ্রী জানিয়েছেন।
তনুশ্রী এ দিন গাদিয়াড়ার সরকারি ট্যুরিস্ট লজে তাঁর অস্থায়ী আবাস থেকে বেরোন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ। শসাটি নহলা অবিনাশ হাইস্কুলে ১১১এ বুথ পরিদর্শনের শেষে তিনি বলেন, ‘‘এই বুথে যাঁরা চোখে দেখতে পান, তাঁদের অন্ধ সাজিয়ে প্রক্সি-ভোট দেওয়া চলেছে। আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি।’’
বুথ পরিক্রমার ফাঁকেই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি খবর পান, কুমারগড়ে বিজেপি সমর্থকদের ভোট দানে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। তিনি গ্রামে ঢোকার পরে দেখেন, পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা করছেন কিছু যুবক। এই গ্রামের ভোট হয় জোকা প্রাথমিক স্কুলে। বুথ নম্বর ৬৭। তনুশ্রী বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গ্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে জটলায় থাকা যুবকেরা উধাও হয়ে যান। কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, ওই যুবকেরাই তাঁদের বুথে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন। তনুশ্রী রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে। তনুশ্রী বুথে ঢোকেন। তাঁর অভিযোগ, এক মহিলার হয়ে বেআইনি ভাবে প্রক্সি-ভোট দিচ্ছিলেন তাঁর পুত্রবধূ। তনুশ্রী বলেন, ‘‘আমি ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি তিনি চোখে ভালই দেখতে পান। শেষ পর্যন্ত আমার জেদে ওই মহিলা নিজের ভোট নিজে দেন।’’
এরপরেই তৃণমূল এজেন্টের সঙ্গে তুমুল বচসা হয় তনুশ্রীর। বুথে উত্তেজনা ছড়ায়। শেষ পর্যন্ত বুথে মোতায়েন বাহিনী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। তাঁরা তনুশ্রীকে বাইরে বের করে আনে। তনুশ্রী বলেন, ‘‘আমাকে কটূক্তি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বুথে যাতে উত্তেজনা না বাড়ে তাই বেরিয়ে এলাম।’’
তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, প্রার্থী বুথে ঢুকে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে বারণ করা হয়। কোনও কটূক্তি করা হয়নি। বুথ থেকে বেরিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ে পিল পিল করে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তনুশ্রী ঘেরাও হন। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, বিজেপি কর্মীদের দেওয়া ‘মিথ্যা তথ্যের’ ভিত্তিতে বিজেপি প্রার্থী গ্রামে ঢুকেছেন। কাউকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘কাউকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। বিজেপির পায়ের নীচে মাটি নেই দেখেই প্রার্থী এ সব নাটক করেন।’’
বুথ পরিক্রমা শেষে তনুশ্রী অবশ্য বলেন, ‘‘মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় ভোটারদের ভয় দেখানো, বেআইনি ভাবে প্রক্সি-ভোট দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। কমিশনকে জানিয়েছি।’’