নিহত আনন্দ বর্মণের বাবা জগদীশ বর্মণ এবং মা বাসন্তী বর্মণ। নিজস্ব চিত্র।
যত দিন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাত্বাধীন সরকার রয়েছে তত দিন কোনওরকম সাহায্য চান না কোচবিহারের শীতলকুচিতে নিহত যুবক আনন্দ বর্মণের বাবা জগদীশ বর্মণ এবং মা বাসন্তী বর্মণ। রাজ্যে বিজেপি-র সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তবেই সাহায্য নেবেন তাঁরা। বুধবার কোচবিহারে বিজেপি-র দলীয় দফতরে বসে এমনই পণের কথা ঘোষণা করলেন আনন্দের বাবা এবং মা। বুধবার সকালে শীতলখুচি পৌঁছন মমতা। চতুর্থ দফায় ভোট চলাকালীন ওই কেন্দ্রে নিহত ৫ জনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মমতা। তার মধ্যে ছিলেন আনন্দের দাদু ক্ষিতীশচন্দ্র রায় এবং মামা জগদীশ চন্দ্র রায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাতকে আমল দিচ্ছেন না আনন্দের বাবা এবং মা।
বুধবার বিজেপি-র ছত্রছায়ায় থাকা জগদীশ অভিযোগ করেন, ‘‘আনন্দের দাদুকে টাকার লোভ দেখিয়ে বাড়ি থেকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে। দাদুর কথা শুনব না। ছেলে আমার। আমি যা সিদ্ধান্ত নেব তাই হবে। আমরা তৃণমলের সরকারের কাছে দাবি করছি না। তৃণমূল সরকার আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। ওরা আগে থেকে হুমকি দিচ্ছিল, ভোট দিতে গেলে তোমার ছেলের জীবন নেওয়া হবে। আমার ছেলের জীবন নিলই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমার লাভ হবে না। আমি বিজেপি-র সরকারের কাছে বড় ছেলের জন্য চাকরির দাবি করেছি। তৃণমূলের সরকারের কাছে আমি কিছু চাই না। বিজেপি সরকার আসবেই। তখন আমি ছেলের চাকরি চাই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষিতীশচন্দ্রের সাক্ষাৎ নিয়ে জগদীশের মন্তব্য, ‘‘শ্বশুরমশাই আমার সঙ্গে আলোচনা করে যাননি। তৃণমূলের বাহিনী এবং পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। আমার শ্বশুরমশাই তৃণমূল বা বিজেপি করেন কি না জানি না। তবে উনি বিজেপি-তেই ভোট দেন।’’
জগদীশের সুর আনন্দের মা বাসন্তী বর্মণের গলাতেও। বাবার পদক্ষেপ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি আলোচনা করে যাননি। আমাকে না জানিয়েই গিয়েছেন। ভয় দেখিয়ে বা টাকাপয়সা দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা তৃণমূল সরকারের দেওয়া সাহায্য নেব না।’’
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিহত আনন্দের দাদা গোবিন্দের জন্য চাকরির দাবি জানিয়েছিলেন ক্ষিতীশচন্দ্র। সেখান থেকে বেরিয়েই উল্টো সুর সেই ক্ষিতীশচন্দ্রের গলায়। তিনি বলছেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা জোর করে আমাকে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিয়ে যায়। তাঁর কাছে পরিবারের কোনও সদস্যের জন্য চাকরি প্রার্থনার কথাও তাঁরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন।’’
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বর্মণ পরিবারের উপর ‘খবরদারি’ করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। রাজনৈতিক তরজা শুরু হতেই পাল্টা তোপ দেগেছে জোড়াফুল শিবিরও। কোচবিহারের তৃণমূল নেতা আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, ‘‘৫ শহিদের পরিবারকে নিয়ে রাজনীতি না করে বিজেপির উচিত প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ানো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথাভাঙ্গায় গিয়েছিলেন এবং তিনি প্রতিটি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। আনন্দ বর্মণের দাদুও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রত্যেকেরই উচিত ওই পরিবারগুলির পাশেও দাঁড়ানো।’’