মঞ্চে তখন নরেন্দ্র মোদী। শনিবার বিএনআর ময়দানে। নিজস্ব চিত্র।
রেলশহরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। খাতায়কলমে সভা শুরুর সময় ছিল শনিবার সকাল ৯টা। অথচ বেলা ১০টাতেও সভাস্থলের ৭০ শতাংশই ফাঁকা! পুলিশ লোক আটকাচ্ছে বলে মঞ্চ থেকে অভিযোগ তুললেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। পরে আসরে নামলেন খোদ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নরেন্দ্র মোদী যখন মঞ্চে উঠলেন, মাঠ অনেকটাই ভরল বটে। তবে শেষ প্রান্তের একাংশ সেই ফাঁকাই থেকে গেল। যে অংশে ভিড় ছিল, সেখানেও দেখা যায়নি জমাটি ভাব।
নরেন্দ্র মোদী অবশ্য সভামঞ্চে উঠেই বলেছেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য, এত বেশি সংখ্যায় মানুষ বিজেপিকে আশীর্বাদ দিতে এসেছেন। আপনাদের এই উৎসাহ পরিষ্কার বলছে, বাংলায় এ বার বিজেপি সরকার।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ১৯টি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের প্রচারে এ দিন খড়্গপুর শহরের বিএনআর ময়দানে মোদীর সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। দলীয় নেতৃত্ব দেড় লক্ষ জনসমাগমের কথা শুনিয়েছিলেন। তবে তা যে হয়নি, তা ধরা পড়ছে বিজেপি নেতৃত্বের কথাতেই। বিজেপির রাঢ়বঙ্গের মুখপাত্র তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, “শেষ মুহূর্তে মাঠে যা লোক ছিল, তার দ্বিগুণ লোক পথে আটকে ছিল। আসলে আমার ধারণা পুলিশ অতি সতর্কতা অবলম্বন করায় এই সমস্যাটা হয়েছে।” খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কটাক্ষ, “দু’তিনটি জেলা ও ঝাড়খণ্ড থেকে লোক আনলেও নরেন্দ্র মোদীর সভায় ভিড় হয়নি। এটা বিজেপির ব্যর্থতা। আসলে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই মানুষ ওঁকে দেখতে চাইছে না।”
এ বারের ভোট প্রচারে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ— বিজেপির বহু কেন্দ্রীয় নেতার প্রচারেই আশানুরূপ ভিড় হয়নি। ফলে, মোদীর সভা নিয়ে বাড়তি তৎপরতা ছিল গেরুয়া শিবিরে। এ দিন সকালে সভার মাঠ প্রাথমিক ভাবে না ভরায় পুলিশের দিকেই আঙুল তোলেন বিজেপি নেতৃত্ব। মঞ্চ থেকে দলের রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশকে বলছি গেট খুলে সকলকে দ্রুত ঢুকতে দিন। অকারণ আটকে রাখবেন না। প্রচুর মানুষ গেটের বাইরে জমে গিয়েছে। নিমপুরায় ১০টি বাস আটকে দেওয়া হয়েছে।”
এতেও সুরাহা হয়নি। শেষে বেলা ১০টা ৪০ নাগাদ মাইক হাতে মঞ্চ থেকে সবাইকে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান দিলীপ ঘোষ নিজে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “পুলিশের সহযোগিতার দরকার নেই। আপনারা ব্যারিকেড সরিয়ে যে ভাবে খুশি ঢুকে পড়ুন।” এর পরেই হুড়মুড়িয়ে সভাস্থলে ঢুকতে থাকে লোক। মাঠের মাঝামাঝি ছিল মঞ্চ। লোক জমায়েতের জন্য যে জায়গা ছিল তা শেষ পর্যন্তও পুরোপুরি ভরেনি। মাঠের উত্তর পশ্চিম অংশের কিছুটা ফাঁকা ছিল। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ৫০ হাজারের মাঠে শেষ পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষ এসেছিল। রাস্তাফাঁকা ছিল।”