সভায় চন্দনা। নিজস্ব চিত্র
মাটির বাড়ি। সংসারের খরচ জোগাড় করতে স্বামীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে দিনমজুরিও করেন। বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করায় জামানতের টাকা তুলতে দলীয় কর্মীদের কাছে ধারও করতে হয়েছে বলে তাঁর দাবি। এমনই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে আসা বিজেপির শালতোড়া কেন্দ্রের প্রার্থী চন্দনা বাউরিকে রবিবার বাঁকুড়ার জনসভার মঞ্চ থেকে ‘গোটা বাংলার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “চন্দনাদেবী কেবলমাত্র শালতোড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নন, উনি গোটা বাংলার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের প্রতীক।” তিনি যুক্ত করেন, “এ ওই সব শ্রমিকদের মুখ, যাঁদের তৃণমূলের তোলাবাজেরা অতিষ্ঠ করে রেখেছেন। এ ওই গরিবদের মুখ, যাঁদের চাল, পাকা ঘর, যাঁদের অধিকারকে তৃণমূলের তোলাবাজেরা ছিনিয়ে নিয়েছে। আজ এই ধরনের মুখই বাংলার গরিব, শ্রমিকদের ন্যায়বিচার দেবে। ওঁদের অধিকার দেবে।”
চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘মোদীজি আমাদের সারা দেশের আদর্শ। এ দিন সভায় তাঁকে প্রণাম জানানোর সুযোগ পেয়েই নিজেকে ধন্য মনে করছিলাম। ভাবতে পারিনি প্রার্থীদের ভিড়ের মধ্যে তিনি আমার নাম খুঁজে নিয়ে এত বড় কথা বলবেন।’’
বছর ত্রিশের চন্দনাদেবী ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয় ভাবে বিজেপি করছেন। তাঁর দক্ষতার জন্য বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় তাঁকে সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে চন্দনাদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা খেটেখাওয়া পরিবার থেকে বড় হয়েছি। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার পরে সংসারের অভাবের জন্য আর সুযোগ হয়নি। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে পাড়ার মহিলা বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে মহিলা মোর্চার সংগঠন তৈরির কাজ শুরু করি। তার পরে দল দায়িত্বও বাড়ায়। কিন্তু আমি কখনও দলের বিধানসভার প্রার্থী হব ভাবিনি।’’
তবে দারিদ্রের কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কঠিন হয়ে পড়েছিল তাঁর কাছে। চন্দনার দাবি, ‘‘জামানতের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। দলের কর্মীরা ধার দিয়েছেন। তবে মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেন, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষকে সামনের সারিতে আনতে প্রাণপণ কাজ করব।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “চন্দনা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মেয়ে। তাঁর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিচক্ষণতাও দারুণ। নিজের যোগ্যতাতেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।’’
চন্দনাকে নিয়ে আবেগ ঝরে পড়েছে গঙ্গাজলঘাটির বিজেপি কর্মী নিখিলেশ আচার্য ও কাজল মুখোপাধ্যায়ের কথাতেও। তাঁরা বলেন, “আমাদের কাছে টাকা ধার নিয়ে চন্দনা মনোনয়ন জমা করেছেন। পিছিয়ে পড়া একটি পরিবার থেকে চন্দনা উঠে এসেছেন। ওকে জেতাতে আমরা দিন-রাত এক করে খাটছি।”
বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া কেন্দ্রেও মহিলা প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন দলের মহিলা মোর্চার বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়। তিনি আবার গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে উঠতে পারাটা একটা সোনালি স্বপ্নের মতো।”
এ দিন দলীয় প্রার্থীদের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়ে মোদী বলেন, “এঁরাই সোনার বাংলা নির্মাণের কারিগর। আপনাদের অনুরোধ, এ সব প্রার্থীদের জিতিয়ে বিধানসভায় পাঠান, যাতে এঁদের উৎসাহ বাড়ে। আপনাদের সেবায় দিনরাত নিয়োজিত থাকেন।”
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরার কটাক্ষ, ‘‘অচ্ছে দিনের আশ্বাস দিয়ে মোদীর সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছেন। বিজেপির প্রার্থীরাও তেমনই হবেন।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “তৃণমূলের লোকেরাই এখন বিজেপিতে। ওদের প্রার্থীদের মানুষ বিশ্বাস করবেন না।”