Dilip Ghosh

Bengal Polls: দিলীপের বারমুডা তত্ত্বের শিকড়ে নারী-বিদ্বেষ

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা মানবীবিদ্যা চর্চা বিশারদ শমিতা সেনের কথায়, ‘‘মমতা যে ভাবে এই ভোটে বিজেপির সঙ্গে দ্বৈরথের মুখ হয়ে উঠেছেন, তাতে উনি নিশানা হতেনই।’’

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৬:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

দিলীপ ঘোষ একা বা প্রথম নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তাঁর ‘বারমুডা-খোঁচা’ আদতে নারী-বিদ্বেষী মানসিকতার প্রতিফলন বলেই দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। আট দফার ভোটপর্ব শুরুর ঠিক আগে এই কুকথায় রাজ্য-রাজনীতির একটি নির্দিষ্ট অভিমুখও অনেকের চোখে পড়ছে।

Advertisement

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা মানবীবিদ্যা চর্চা বিশারদ শমিতা সেনের কথায়, ‘‘মমতা যে ভাবে এই ভোটে বিজেপির সঙ্গে দ্বৈরথের মুখ হয়ে উঠেছেন, তাতে উনি নিশানা হতেনই।’’ বান্দোয়ানে বিজেপির প্রচার-সভায় বুধবার মঞ্চে ছিলেন শুধু এক ঝাঁক পুরুষ নেতা। তাঁদের মধ্যমণি দিলীপবাবু, মমতাকে পা দেখিয়ে শাড়ি না-পরা বা বারমুডা পরার উপদেশ দিয়েও ক্ষান্ত থাকেননি। এর পরেই তিনি বলছেন, ‘‘দিদিমণি এখন আমি একটি মেয়ে বলে ভোট ভিক্ষা করছেন।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে রাজনীতির দ্বন্দ্বের ফলেই এটা ঘটলেও দিলীপবাবুর এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নানা বয়সের মেয়েরা। সদ্য মেয়েদের ছেঁড়া জিন্স পরা সংস্কৃতি-বিরোধী বলে ধিকৃত হন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিংহ রাওয়ত। দিলীপবাবুও পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই ঘুরিয়ে মেয়েদের বারমুডা পরা নিয়ে কটাক্ষ করছেন বলে তাঁরা মনে করছেন। দিলীপবাবু তাঁর মতে অনড়। বরং বিজেপির কাঁথির সভায় ‘যশস্বী প্রধানমন্ত্রী’ নরেন্দ্র মোদীর ‘দিদি, ও দিদি’ বলে চটুল ভঙ্গিতে কটাক্ষে অনেকেই হতবাক! অনেকেই বলছেন, ইস্তাহারে মেয়েদের গুরুত্ব দিলেও মেয়েদের বিষয়ে বিজেপি-র প্রকৃত মানসিকতা এই সব মন্তব্যেই ফুটে উঠছে। “দল নির্বিশেষে নেতানেত্রীরা নারী-বিরোধী কথা বলেন, কিন্তু বিজেপি যে মনুবাদের কথা বলে, তার মধ্যেই মেয়েদের ছোট করার মানসিকতা নিহিত”, বলছেন বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী সিপিএমের তরুণ মুখ পৃথা তা। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী পায়েল সরকার বলছেন, “এটুকু বলব, পোশাক মেয়েদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের নেত্রী স্মৃতি ইরানিও সদ্য এটাই বলেছেন।”

Advertisement

কখনও ধর্ষণ-প্রসঙ্গে মুলায়ম সিংহ যাদব বলেছেন, ও-সব ছেলেরা একটু-আধটু করে থাকে। নরেন্দ্র মোদীও একদা শশী তারুরের স্ত্রীকে ‘৫০ কোটির বান্ধবী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। মমতা, তাঁর দল বা সিপিএমেরও কুকথার নজির রয়েছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক মৈত্রেয়ী চৌধুরীর চোখে কিন্তু এই ধরনের পিতৃতান্ত্রিক রক্ষণশীল মনোভাবকে বিজেপি একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছে। তিনি মনে করাচ্ছেন, ‘‘১৯৪০এর দশকে হিন্দু কোড বিল বিতর্কেও সংস্কৃতির নামে হিন্দু বিবাহ বা নারীস্বাধীনতা প্রসঙ্গে অত্যন্ত রক্ষণশীল অবস্থান ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের।’’

দিলীপবাবু বা মোদীর এখনকার মন্তব্য নিয়ে শমিতাও বলছেন, “মমতার ঠিক, ভুল নানা দিক আছে। কিন্তু তিনি একজন মেয়ে এবং মা, বৌয়ের বাইরের ছক-ভাঙা মেয়ে। বিজেপি বা বাংলার তথাকথিত ভদ্রলোক শ্রেণীর একাংশের তাঁকে নিয়ে সমস্যার এটাও কারণ। হয়তো সেই জন্যই এই ধরনের মন্তব্য নিয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement