—প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটে এ বার ভরকেন্দ্র নন্দীগ্রাম। আর সেই নন্দীগ্রাম মামলাতেই এ বার নয়া মোড়। গত জুনে লকডাউন চলাকালীন নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন পর্বের একাধিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সোমবার সেই সব মামলা পুনর্বহালের নির্দেশ দিল হলদিয়া মহকুমা আদালত। বিচারক জানিয়েছেন, ওই সব মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, অথচ জামিন নেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। যাঁরা জামিন নিয়েছেন, তাঁদের সমন পাঠানো হবে।
এ বার নন্দীগ্রামের ভোট যুদ্ধে মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ১ এপ্রিল ভোট এই বিধানসভায়। তার আগে আদালতের এমন নির্দেশের জেরে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের, শেখ শাহবুদ্দিন-সহ এলাকার বহু তৃণমূল নেতা গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন। কারণ, খুন, অপহরণ, মারধরের এই সব মামলায় প্রায় ১৫০ জনকে চার্জশিটে ‘ফেরার’ দেখানো হয়েছিল এবং তাঁদের অধিকাংশই জামিন নেননি। ফলে, তাই আদালতের নির্দেশ মতো এঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে।
যে ৩টি মামলা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে কোনও জনস্বার্থ মামলা করা হয়নি, তারই একটিতে অভিযুক্ত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট মেঘনাদ পাল। ফলে, গোটা ঘটনায় শুভেন্দুর ভূমিকা রয়েছে বলে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জমি আন্দোলনের মুখ, নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলছেন, ‘‘২০২০ সালে শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন তিনি বিজেপিতে গিয়ে জনস্বার্থ মামলা করে তৎকালীন আন্দোলনকারীদের জেলে ভরতে চাইছেন।’’ বিজেপির জেলা (তমলুক) সহ-সভাপতি প্রলয় পালের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর কথায় তো আর আদালত চলে না। আদালত যা ঠিক মনে করেছে, সেই নির্দেশই দিয়েছে।’’
গত বছর ৯ এবং ১০ জুন হলদিয়া মহকুমা আদালতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়কার মোট ৯টি মামলা প্রত্যাহার করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। তার মধ্যে ৬টি মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশের আইনি বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা করেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আইনজীবী নীলাঞ্জন অধিকারী। গত ৫ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, ওই মামলাগুলি যে পর্যায় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, পুনরায় সেই পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে।
তারই প্রেক্ষিতে এ দিন হলদিয়া মহকুমা আদালতে মামলার শুনানি ছিল। বিচারক নির্দেশ দেন, যে হেতু উচ্চ আদালত মামলাগুলি শুরুর নির্দেশ দিয়েছে, তাই পুরনো পর্যায় থেকেই মামলাগুলি পুনর্বহাল করা হবে। তবে কি মামলার অঙ্ক ছায়া ফেলবে নন্দীগ্রামের ভোট ভাগ্যে? তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘যে আশায় এ সব করা হচ্ছে, তা পূরণ হবে না।’’ বিজেপির জেলা (তমলুক) সহ-সভাপতি প্রলয় পালের বক্তব্য, ‘‘মানুষ পাশে রয়েছেন কি না, সেটা ভোটের ফলেই বোঝা যাবে।’’