ঘোষণা: শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারের উপরে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে নতুন করে জট তৈরি হল তাঁর উত্তরবঙ্গ সফর নিয়ে। প্রথমে ঠিক ছিল, তিনি আজ, মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি আসবেন। তার পরে নিষেধাজ্ঞার ২৪ ঘণ্টা পার হলেই জনসভা করবেন। ১৭ তারিখে ভোটের প্রচারে মমতার দীর্ঘ কর্মসূচি ছিল শিলিগুড়ি, সংলগ্ন অঞ্চল এবং জলপাইগুড়ি জেলায়। কিন্তু রাতে সেই সূচি আবার বদল হয়। তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী কাল, বুধবার সকালে আসতে পারেন শিলিগুড়িতে।
নতুন সূচিতে তাঁর কোথায় কী জনসভা হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে এ দিন জানানো হয়নি। কিন্তু ১৪ তারিখ সকালে শিলিগুড়ি এলে পুরনো কর্মসূচি মেনে মমতা সভা ও রোড শো করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এখানে তাঁর ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি, গোঁসাইপুর, শিলিগুড়িতে সভা ও রোড শো ছিল। বুধবার তাঁর শীতলখুচিতেও যাওয়ার কথা ছিল।
তৃণমূলের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে আটকাতেই এই সব করা হচ্ছে। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন তো পুরোপুরি পদ্ম-দলের কথায় চলছে। দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, রাহুল সিংহ প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন, তাতে শো-কজ পর্যন্ত করা হচ্ছে না। আর মুখ্যমন্ত্রীকে প্রচারে আটকানো হচ্ছে। এ ভাবে মানুষের হৃদয় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে রাখা যাবে না। ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমার নির্বাচনী ক্ষেত্রে বিজেপি যা করছে তা নিয়ে অন্তত ২০টি অভিযোগ করেছি। কিছু ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।’’
এর আগে নির্বাচন কমিশন শীতলখুচিতে যাওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের উপরে ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। একই সঙ্গে ১৭ তারিখের ভোটের ক্ষেত্রেও ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তৃণমূলের দাবি, এগুলি সবই মমতাকে আটকানোর চেষ্টা। যদিও এই নিয়ে কমিশনের তরফে কিছুই বলতে চাওয়া হয়নি।
নিষেধাজ্ঞা জারির পরে এ দিন মমতার সঙ্গে কথা হয় গৌতম দেবদের। প্রথমে ঠিক হয়, তিনি মঙ্গলবার রাতে নিষেধাজ্ঞা উঠতেই শিলিগুড়িতে সভা করবেন। সেই সূচি চূড়ান্ত করতেই হিলকার্ট রোডের দলীয় দফতরে জরুরি বৈঠকে বসেন গৌতম দেব, প্রবীণ নেতা তথা শিলিগুড়ির প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট প্রতুল চক্রবর্তী, জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার, সাধারণ সম্পাদক মদন ভট্টাচার্য-সহ নেতা-নেত্রীরা। রাতের সভার প্রস্তুতি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শিলিগুড়িতেও গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না কর্মসূচি নেওয়া হবে। কলকাতাতেও ওই সময় ধর্নায় বসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। শীতলখুচিতে আধা সামরিক বাহিনীর গুলি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেই এই ধর্না বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। তার পরে গৌতম দেব জানান, রাত ৮টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই শিলিগুড়ির পাশে বাইপাসে মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন। পরদিন ধূপগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে উনি যাবেন। শীতলখুচিতে মৃতদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করবেন। বাকিটা সময়মতো জানানো হবে।
কিন্তু রাতে আচমকা এই সূচি বদলে যায়। এখন ঠিক আছে বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে আসতে পারেন। কিন্তু তাঁর সে দিনের সূচি চূড়ান্ত হয়নি। তিনি কি এর মধ্যেও শীতলখুচিতে যাবেন? উত্তরের তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বুধবারের বদলে বৃহস্পতিবারও মমতা সেখানে যেতে পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই। তবে এই নিয়েও এখনই চূড়ান্ত কিছু ঠিক হয়নি। সবটাই আজ, মঙ্গলবার ঠিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।