নন্দীগ্রামে ভোটের দিন বয়ালের বুথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্বাচন কমিশনের নজরে এ বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার একটি চিঠিতে কমিশন বলেছে, নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে মমতার জানানো অভিযোগ ‘তথ্যগত ভাবে ভুল’। শুধু তা-ই নয়, মমতার আনা অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেও চিঠিতে জানিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ভোট ছিল নন্দীগ্রামে। ভোটে ‘কারচুপি’-র অভিযোগ এনে মমতা নিজে হাতে চিঠি লিখে কমিশনকে পাঠিয়েছিলেন। মমতার আনা সেই অভিযোগের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। সেই সঙ্গে বয়ালের বুথে তৃণমূল নেত্রীর আচার-আচরণ নির্বাচনী আদর্শ বিধি ভেঙেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
কমিশনের কথায়, ‘‘একজন প্রার্থী, যিনি কিনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও, তিনি ভোটারদের এ ভাবে ভুল পথে চালিত করে গিয়েছেন। এর থেকে বড় বিধিবহির্ভূত কাজ আর কী হতে পারে।’’ নন্দীগ্রামে ভোট চলাকালীন বয়ালের বুথে মমতার আচরণ প্রসঙ্গে কমিশন বলেছে, ‘‘এতে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় অন্য রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হতে পারত।’’
রবিবার এই বিষয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কমিশন। সেখানে তারা জানিয়েছে, আদর্শ আচরণবিধি এবং জন প্রতিনিধি আইনে এব্যাপারে দ্রুত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে তারা।
যদিও কমিশনের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে।’’ দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব খতিয়ে দেখছে। তবে বয়ালে যা ঘটেছে তা সবাই দেখেছে। ১৪৪ ধারা জারি হওয়া সত্ত্বেও মেলার মাঠের মতো ভিড় করে দাঁড়িয়ে সেখানে বিজেপি-র হয়ে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। কমিশন সেটা কী ভাবে অস্বীকার করতে পারে।’’ কমিশনের পক্ষপাতিত্বের কথা তুলেই কুণাল বলেন, ‘‘আমরা এর আগেও বলেছি, কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। এখানেও সেটাই হচ্ছে।’’
নন্দীগ্রামে ভোট প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘চূড়ান্ত অসভ্যতা হয়েছে নন্দীগ্রামে। যিনি এখানে বিজেপি-র প্রার্থী, তাঁর নেতৃত্বে রাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভোটে চিটিংবাজি হয়েছে। আমরা ৬৩টা অভিযোগ করেছি।’’ মমতার এই অভিযোগ প্রসঙ্গেই কমিশনের দাবি, অভিযোগগুলি তথ্যগত ভাবে ভুল এবং ভিত্তিহীন।
যদি বিজেপি-র কথায় ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। নন্দীগ্রামেও ভাল ভোট হয়েছে।’’ বিজেপি-র রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল যদি কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে থাকে তবে বুঝতে হবে কমিশনের উপর তাদের ভরসা নেই। তার মানে সংবিধানেও ভরসা নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও ভরসা নেই। আমরা নির্বাচন কমিশন কী বলেছে তা নিয়ে কোনও কথা বলব না। তবে মানুষ কী বলে সেটাই দেখার। আমার মনে হয় মানুষ যা বলার তা নন্দীগ্রামে বলে দিয়েছে।’’
পরে তৃণমূলের তরফে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কমিশনের চিঠি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যখন মমতা বুথে বসেছিলেন, তখন তো সেখানে কমিশনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তারা কী বলেছিলেন যে এতে শৃঙ্খলা ভাঙতে পারে। যদি তখন না বলে থাকেন তবে এখন বলছেন কেন?’’