Mamata Banerjee

Bengal Polls: বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর, শাহকে তোপ মমতার, গুরুত্ব দিতে নারাজ বঙ্গভোটের পদ্মসেনাপতি

অমিতকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘চোখদু’টো লাল টুকটুক করছে। যেন এই খেয়ে নেবে! এই খেয়ে নেবে! বাঘ দেখলেও লোকে এত ভয় পায় না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৫৯
Share:

পূর্ব বর্ধমানের সভায় মমতা। নিজস্ব চিত্র।

ঠিক এক মাস আগে নন্দীগ্রামে আহত হওয়ার পরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাঁর পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে ভোটপ্রচারে গিয়ে তৃণমূলনেত্রীর দাবি, তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই চক্রান্তের ‘উৎস’ও চিহ্নিত করেছেন তিনি। মমতা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর নিশানা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Advertisement

মেমারির সভায় তিনি বলেন, ‘‘এত বাজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এত গুন্ডা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এত দাঙ্গাবাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখিনি, আমরা জীবনে দেখিনি।’’ ওই সভায় মমতা বলেন, ‘‘সবচেয়ে জঘন্য ওই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, না! টাকা ছড়াচ্ছেন! ভাবছেন, সব কিনবেন টাকা দিয়ে! কিনুন। কত কিনবেন! কত দিন কিনবেন! বলি, এত টাকা পান কোথায়? এত এত টাকা! কত কত খরচ করেন এক একটা মিটিংয়ে! হিসেব দেবেন? আমি জানি, আমি এ সব বলার পরেই আপনারা আমাকে খুন করার চক্রান্ত করবেন। অলরেডি পা খোঁড়া করে দিয়েছেন। জেনে রাখুন, আমি ভয় পাই না। আমি বাঘের বাচ্চার মতো লড়ব। দেখি আপনারা কী করেন।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শুক্রবার নিশানা করেননি মমতা। বরং পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ৩ দফার ভোটে অশান্তির জন্য সরাসরি দুষেছেন অমিতকে। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বলি, কেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাউকে ভয় দেখাবে পুলিশ? ভাবছে, আমি জানি না! জানেন, বাইরে থেকে গুন্ডাগুলোকে পুলিশ সাজিয়ে আনছে আর অত্যাচার করছে। আমি রাজ্য পুলিশ আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর দোষ দেখি না। অমিত শাহ পুলিশদের বাজে কাজ করতে শেখায়। ও একটা গুন্ডা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে পুলিশকে দিয়ে এ সব কাজ করাচ্ছে। বলছে, সিআরপিএফ নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করছে। সব অমিত শাহের দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গে মমতার অভিযোগ, ‘‘সব পুলিশ না। কাউকে কাউকে আবার পুলিশ সাজিয়েও নিয়ে আসা হচ্ছে।’’

Advertisement

‘‘আমাদের লোকাল কিছু পুলিশকেও কিনেছে। নিচুতলার পুলিশ নয়, উঁচুতলার পুলিশ। আমি কিন্তু সব খবর রাখি।’’ এর পর নাম না করে অমিতকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘চোখ দু’টো লাল টুকটুক করছে। যেন এই খেয়ে নেবে! এই খেয়ে নেবে! বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর। বাঘ দেখলেও লোকে এত ভয় পায় না।’’ মমতার এই মন্তব্য প্রসঙ্গে শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি উপেক্ষা করছি। আপনারাও করুন।’’

বিজেপি-র বহিরাগত নেতাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি বাধানোর অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘ওরা এক দিন থাকবে, আমি থাকব ৩৬৫ দিন! আমি কিন্তু দেখে নেব, কে কত ঝামেলা করতে পারে! আমি নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের বলব, আপনারা ভাল থাকুন, ভাল করে কাজ করুন। আর উঁচুতলার পুলিশকে বলব, মনে রাখবেন, টাকা আসে টাকা যায়।’’

ঘটনাচক্রে, শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে এসেছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। ফলে মমতা কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল রাজনৈতিক মহলে। শুক্রবার মমতা ৩টি সভা করেন পূর্ব বর্ধমানে। প্রথম সভাটি ছিল জামালপুরে। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী অলক মাঝি এবং রায়নার প্রার্থী শম্পা ধাড়ার সমর্থনে। দ্বিতীয় সভাটি মেমারির গন্তারে। মেমারি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্য এবং মন্তেশ্বরের প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর জন্য প্রচারের উদ্দেশ্যে। তৃতীয় তথা শেষ সভাটি বর্ধমান শহর লাগোয়া জোতরামে। বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নিশীথ মালিক এবং বর্ধমান দক্ষিণের খোকন দাসের সমর্থনে।

অমিতকে ‘নিয়ন্ত্রণের’ জন্য শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও বার্তা দেন মমতা। মেমারিতে বলেন, ‘‘মোদীকে বলব, আপনার গৃহমন্ত্রীকে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) নিয়ন্ত্রণ করুন। দাঙ্গা লাগাচ্ছে, সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।’’ যদিও সেই সঙ্গেই তাঁর ‘সতর্কবাণী’, ‘‘দু’টো গুজরাতি মিলে দখল করে নিলে বাংলার সম্মান বাঁচবে না।’’ বাংলার ভাবাবেগের কথা এসেছে জোতরামের সভাতেও। জনতার উদ্দেশ্যে তৃণমূলনেত্রীর পরামর্শ, ‘‘কেউ ফোন করলে এখন ‘হ্যালো’ বলবেন না। বলবেন ‘জয় বাংলা’। পরে না হয় ‘হাই-হ্যালো’ বলবেন। এখন বলবেন, 'জয় বাংলা, কেমন আছ’?’’

ওই সভায় সাঁইবাড়ি গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি-কে নিশানা করেন মমতা। বলেন, ‘‘ওদের সন্ত্রাস দেখলে আমার সাঁইবাড়ি সন্ত্রাসের কথা মনে পড়ে।’’ বিজেপি-কে ঠেকানোর জন্য মহিলাদের অভিনব পরামর্শও দিয়েছেন মমতা— ‘‘হাতপাখা নিয়ে তাড়া করবেন। হাতপাখার পিছনটা বড্ড লাগে।’’ সেই সঙ্গে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘কেউ প্রতিবাদ না করলে আমি করবই। লড়াই হবেই। মা-বোনেরা ভয় পাবেন না। লড়াই করবেন। হারবেন না।’’ তাঁর 'খেলা হবে' স্লোগান ঘিরে বিতর্ক প্রসঙ্গে মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি-র মতো ছদ্মবেশী সাধু নই। তাই হাতা-খুন্তির খেলা হবে। এটা মনে রাখবেন।’’

বিজেপি-র সমালোচনার পাশাপাশি একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। জানিয়েছেন, ফের তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড করে ঋণের বন্দোবস্ত করে দেবে রাজ্য সরকার। দুয়ারে রেশন পৌঁছে যাবে। স্বাস্থ্যসাথী যাঁরা করাননি তাঁদের জন্য অগস্টে আবার ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প হবে। এই প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পে এ বারে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’’ রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় এলে ৭৫ হাজার কোটি টাকার শিল্প হবে সিঙ্গুর, পালসিট, বুদবুদ, বাঁকুড়ায়। পাঁচামিতে হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম কোলিয়ারি। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ পাবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement