আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দলীয় মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ টলি তারকারা।
ব্রিগেড নিয়ে শিলিগুড়ির পর কলকাতা থেকেও বিজেপি-কে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দলীয় মিছিল শেষের সভায় মমতা বললেন, ‘‘ব্রিগেডটাকে বি-গ্রেড করে দিয়েছে ওরা। টাকা দিয়ে সব হয় না। এটা বিজেপি-কে বুঝতে হবে।’’ মোতেরা স্টেডিয়ামের নাম বদল নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘নিজের নামে স্টেডিয়াম করেছেন। করোনা টিকায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরোকে তাঁর ছবি মহাকাশে পাঠাতে বলা হচ্ছে। কোনওদিন দেখা যাবে, ভারতটাই নিজের নামে করে নিয়েছেন।’’
প্রতি বছর নারী দিবসে কলেজ স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল আয়োজন করে তৃণমূল। কিন্তু এই বছর সেই অনুষ্ঠানই হয়ে উঠল কলকাতায় মমতার ভোট প্রচারের প্রথম দিনের কর্মসূচি। সভা থেকে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। গতকালই নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, বাংলায় মেয়েরা সুরক্ষিত নন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা পাল্টা গুজরাতের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘গুজরাত সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে গত বছরে সে রাজ্যে ধর্ষণ হয়েছে ৩ হাজার ৯৫টি। ধর্ষণের শীর্ষে রয়েছে আমদাবাদ। আর ধর্ষণের ঘটনায় উপরের দিকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। আর ওরা বলছে বাংলায় মেয়েরা সুরক্ষিত নয়। বাংলায় মেয়েরা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। সারা দিনরাত এখানে মেয়েরা বাইরে থাকেন, কাজ করেন, কোনও অসুবিধা হয় না।’’
সোমবারের মিছিলে কলেজ স্ট্রিট থেকে নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন টলি তারকারা। একদা বিজেপি-র সমর্থক সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়কেও সোমবারের কর্মসূচিতে দেখা যায়। ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরাও। মিছিলের একবারে শুরুতে মমতার সঙ্গে জুন মালিয়া, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, লাভলি মৈত্র, সায়নী ঘোষ, সুদেষ্ণা রায়ও প্রথম থেকেই উপস্থিত ছিলেন। ডোরিনা ক্রসিংয়ের সভা মঞ্চ থেকে এঁদের অনেকেই বক্তৃতা করেন। শেষে বলতে ওঠেন তৃণমূলনেত্রী।
মমতার কথাতে সোমবারও ফিরে আসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই চাল ফুটিয়ে খাওয়ার জন্য জ্বালানি নেই। গ্যাস কিনতে হচ্ছে ৯০০ টাকায়। মানে চাল ফোটাতে ৯০০ টাকা লাগবে। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
ব্রিগেড থেকে ‘আসল পরিবর্তন’-এর ডাক দিয়েছে মোদী। তার উত্তরেই মমতার জবাব, ‘‘আগে দিল্লি সামলা, তারপর ভাববি বাংলা।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণের একাধিক সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে, করোনা টিকায় মোদীর ছবি, সব নিয়ে সোমবারও ফের আওয়াজ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কর্মসূচি থেকেই কার্যত কলকাতায় প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন তিনি।
তবে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সভার তাল কাটল স্কুল সার্ভিস কমিশনে আটকে থাকা মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভে। ডোরিনা ক্রসিংয়ে সভামঞ্চের সামনেই বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। অবিলম্বে নিয়োগের পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, যে রাজ্যে নারী প্রধান শাসক, সেখানে কেন মহিলারা বঞ্চিত। বিক্ষোভরতদের মধ্যে নদিয়ার বাসিন্দা প্রথমা মিত্র বললেন, ‘‘২০১৬ সালে যে স্কুল সার্ভিসের যে পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা অনশনে বসেছিলাম। তখন শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ভরসা দিয়েছিলেন, যদিও দু’বছর বাদেও কোনও সুরাহা হয়নি। নারী দিবসে দিদিকে সেই প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিতে এসেছি।’’