শব্দদূষণ: ডিজে বক্স নিয়ে তৃণমূল সমর্থকেরা। বুধবার, বঙ্কিম সেতুর নীচে। নিজস্ব চিত্র।
ছোট একটি লরির উপরে বড় বড় বক্স আর চোঙা বসানো। কানে তালা ধরানো শব্দে বাজছে ‘খেলা হবে, খেলা হবে’। আর সেই গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচছেন দলীয় সমর্থকেরা। ঘটনাস্থল: হাওড়া আদালত, হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও হাওড়া জেলা
স্কুল সংলগ্ন বঙ্কিম সেতুর নীচের
এলাকা। উপলক্ষ, মধ্য হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী ও মন্ত্রী অরূপ রায়ের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ দিন দুপুরে তৃণমূলের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী অরূপবাবু মহকুমাশাসকের (সদর) কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। তাঁর আসার আগেই অবশ্য লরির উপরে ছ’টি চোঙা ও চারটি বড় বক্স চাপিয়ে বিকট শব্দে গান বাজাতে বাজাতে বঙ্কিম সেতুর নীচে হাজির হন শাসক দলের কয়েকশো সমর্থক। ‘খেলা হবে’র দাপটে তখন কানে তালা ধরার জোগাড় আশপাশের লোকজনের। শাসক দলের সমর্থকেরা আসার পরেই মহাত্মা গাঁধী রোড বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ঘুরিয়ে দেওয়া হয় সমস্ত গাড়ি।
এই ঘটনার পরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, হাওড়ার প্রশাসনিক এলাকা বলে পরিচিত ওই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এ ভাবে ডিজে বাজিয়ে ভয়াবহ শব্দদূষণ করা হল কোন যুক্তিতে? বিশেষ করে, জায়গাটি যখন হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে? পুলিশই বা সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন?
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সারা দেশে ডিজে নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও যে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই ভাবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হাওড়া জেলা হাসপাতাল, হাওড়া আদালত ও জেলা স্কুলের পাশে ডিজে বাজানো হয়েছে, সেই দলের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা উচিত।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অধিকাংশ সমর্থকই হেঁটে বা মোটরবাইকে চেপে বঙ্কিম সেতুর নীচে আসেন। ঠিক ছিল, অরূপবাবু
সেখান থেকে হেঁটে ৩০০ মিটার দূরে
ওল্ড কালেক্টরেট বিল্ডিং-এ মহকুমাশাসকের দফতরে যাবেন। কিন্তু তিনি আসার আগেই উৎসাহী সমর্থকেরা বিকট শব্দে ডিজে বাজিয়ে প্রবল নাচানাচি শুরু করে দেন। যদিও অরূপবাবু আসার পরে কিছু ক্ষণের জন্য তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে তিনি মনোনয়ন দিতে যাওয়ার পরেই ফের গান বাজানো শুরু হয়।
এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডিজে কারা এনেছিলেন, আমরা জানি না। এটা কোনও সংগঠিত ব্যাপারও নয়। দলীয় কর্মসূচিতেও ছিল না। অতি উৎসাহী কিছু লোকজন এনে থাকতে পারেন। কারা এনেছিলেন, তা দলের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, জেলা নির্বাচন কমিশনের ভিডিয়ো নজরদারি দল গোটা এলাকার ছবি তুলেছে। সেই ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওড়ার মহকুমাশাসক (সদর) তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মাইকিং ও মিছিলের অনুমতি ছিল। সব কিছুরই ভিডিয়ো করা হয়েছে। যদি এ রকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’