ভোটের আগে চা বাগানে চিতাবাঘ ঠেকাতে পাতা হচ্ছে খাঁচা। নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা নয়, শান্তিপুর্ণ ভোটের পথে প্রধান অন্তরায় এখানে চিতাবাঘ। তাই ধূপগুড়ি এবং নাগরাকাটা বিধানসভা এলাকায় কয়েকটি জঙ্গল ঘেরা চা বাগানে নির্বিঘ্নে ভোটপর্ব সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে ভরসা করতে হয়েছে বনকর্মীদের উপরেও।
শুক্রবার পঞ্চম দফার ভোট রাজ্যে। জলপাইগুড়ির ৭ বিধানসভা আসনের সবগুলিতেই ভোট হবে এই পর্যায়ে। কিন্তু ধূপগুড়ি এবং নাগরাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি চা বাগান এলাকায় নির্বাচন কমিশনের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে চিতাবাঘ। সেই সঙ্গে হাতি নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। আর তাই বাড়তি দায়িত্ব বনকর্মীদের। ভোটের দিন চা বাগান লাগোয়া জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণীর ‘অনুপ্রবেশ’ ঠেকাতে তাঁদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গল লাগোয়া এমন অনেক বুথ রয়েছে যেখানে চা-বাগানের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া সরু রাস্তা দিয়ে ভোট দিতে আসতে হবে। আর সেই রাস্তা দিয়ে প্রায়ই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় চিতাবাঘকে সে কারণেই এই সতর্কতা। চিতাবাঘকে খাঁচাবন্দি করার জন্য চা বাগানে পাতা রয়েছে খাঁচা। পাশাপাশি, বন দফতরের তরফে ভোটকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে হাতি এবং বাইসন তাড়ানোর জন্য পটকা, তুলে দেওয়া হয়েছে। ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে’ যোগাযোগের জন্য বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণী স্কোয়াডের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বুথগুলির ভোটকর্মী এবং কেন্দ্রীয় জওয়ানদের।
বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের রেঞ্জার শুভাশিস রায় শুক্রবার বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি চা বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্ক রয়েছে এবং বাগানে বেশ কয়েকটি খাঁচা পাতাও হয়েছে। তাই ভোটারদের পাশাপাশি ভোটকর্মীদেরও সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা বিচার করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পটকা দেওয়া হয়েছে এবং যে কোন পরিস্থিতিতে বনদপ্তরকে জানানোর কথাও বলা হয়েছে। ভোট উপলক্ষে বাগানে বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছেন বনকর্মীরা।"
চা বাগানে নজরদারিতে থাকা বনকর্মী সুশীল রায় বলেন, ‘‘চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘের আনাগোনা বেড়েছে। কালকে ভোট তাই বাড়তি নজরদারি চালাতে হচ্ছে। কেন না চা বাগানের মাঝখানে যে রাস্তা দিয়ে ভোটাররা যাবেন সেখানেই খাঁচা পাতা রয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই জলপাইগুড়ির বিভিন্ন চা বাগানে চিতাবাঘের হামলায় আহত হয়েছেন ৪ জন।
চা বাগানের বাসিন্দা গনেশ শর্মা বলেন, ‘‘বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্ক রয়েছে। কেন না চা শ্রমিকরা চিতাবাঘ দেখতে পেয়েছেন এখানে। বন দফতরের তরফে বাগানে খাঁচা পাতা হয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীরা রাস্তায় থাকলে শ্রমিকরা বাগানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে ভোট দিতে যেতে সাহস পাবে।’’
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘চা বাগানের কিছু বুথে বন্যপ্রাণীর আতঙ্ক রয়েছে। তাই বনকর্মীরা ভোটারদের নিরাপত্তার সাথে ভোটকেন্দ্রে ও বাড়িতে পৌঁছে দেবেন।’’