প্রতীকী ছবি।
তিনি প্রার্থী নন। কিন্তু আজ তাঁরও হার-জিতের লড়াই!
ভোট-ময়দানের ‘খেলা’য় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন দলের ‘সেনাপতি’!
শ্রীরামপুর লোকসভায় বিধানসভা কেন্দ্র সাতটি। একমাত্র চাঁপদানি বাদে প্রত্যেকটিতে গত বিধানসভা ভোটে জয় হাসিল করেছিল তৃণমূল। তবে, এখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই আবহেই নিজের সংসদীয় এলাকার অন্তত চারটি কেন্দ্র কল্যাণের কাছে ‘বড় পরীক্ষা’। এই চার কেন্দ্র— চাঁপদানি, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া এবং ডোমজুড়ে আজ ভোট। সর্বত্রই প্রচারে প্রাণ ঢেলেছেন কল্যাণ। গলা ফাটিয়েছেন মিছিলে, জনসভায়।
ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দেন। রাজীবের সঙ্গেই অমিত শাহের পাঠানো বিশেষ উড়ানে দিল্লি উড়ে গিয়ে পদ্ম-পতাকা হাতে নেন উত্তরপাড়ার বিদায়ী বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। অতঃপর দু’জনকেই ‘গদ্দার’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করে কল্যাণ দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দাঁড়ালে তাঁদের গোহারান হারাবেন। গেরুয়া শিবির প্রবীর-রাজীবকে তাঁদের পুরনো কেন্দ্রেই টিকিট দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রচার-পর্বে কল্যাণের গলার ঝাঁজও বেড়েছে। ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধের সঙ্গে নানা কথার স্লোগানে পুরনো দুই সতীর্থকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। পক্ষান্তরে, কল্যাণের বিরুদ্ধে সুর চড়ান রাজীবও। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে উত্তরপাড়ায় পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া প্রবীরও।
শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসু কল্যাণের প্রাক্তন জামাই। বছর দু’য়েক ধরে শ্রীরামপুরের রাজনীতিতে তাঁর উদয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কবীরশঙ্কর এখন শ্রীরামপুরে থাকছেন। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান পরিবৃত অবস্থায় তাঁকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন শহরবাসী। তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তিনিও জোরকদমে প্রচার চালিয়েছেন। পোড়খাওয়া সাংসদ কল্যাণ বিজেপির অভিযোগ ফিরিয়ে দিয়েছেন। পাল্টা কেন্দ্রের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরব হয়েছেন বিজেপির ‘ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি’র নিয়েও।
শ্রীরামপুরে এ বারেও তৃণমূলের প্রার্থী চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়। উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে এখানে টানা চার বার বিধায়ক হওয়ার জন্য লড়ছেন চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি সুদীপ্তবাবু। তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ্ব। বিশেষত হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তিতে সাহায্য করার ব্যাপারে সুনাম রয়েছে।
চাঁপদানিতে কল্যাণ তথা তৃণমূলের ‘চক্ষুশূল’ কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। গত কয়েক বছরে নানা ক্ষেত্রে দু’পক্ষের বিরোধ সামনে এসেছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কল্যাণের কাছে এঁটে উঠতে পারেননি মান্নান। তবে, গত বিধানসভায় মান্নানের কাছে পরাজিত হন তৃণমূলের মুজফ্ফর খান। সেই হার কাঁটার মতো বিঁধেছিল কল্যাণের গায়ে। তৃণমূল শিবির বিলক্ষণ জানে, ভোটের ময়দানে মান্নান ‘বড় খেলোয়াড়’। বাম-আইএসএফ-কে সঙ্গে নিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত মান্নানও। এই অবস্থায় মান্নানকে হারাতে মরিয়া কল্যাণ তাঁর বিরুদ্ধে সমানে তোপ দেগে গিয়েছেন।
কল্যাণ দাবি করছেন, ‘‘আমার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা জিতব। আর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সব চ্যালেঞ্জেই আমরা জিতব।’’
জেতা-হারার উত্তর মিলবে আগামী ২ মে।