—প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলমহলের জেলাগুলিকে ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামকে ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ জেলা হিসেবে বিবেচনা করেই বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে প্রশাসনের খবর। সূত্রের দাবি, গত বছর খানেক ধরে ঝাড়গ্রাম এলাকায় ‘মাওবাদী’ পোস্টার মিলেছে। তার ভিত্তিতেই কমিশন মনে করছে, বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রামকে ‘মাওবাদী’ উপদ্রুত জেলা হিসেবেই গণ্য করা উচিত।
সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভার ১৩০৭টি বুথে এক সেকশন (৮ জন) করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। এ কাজে ১২৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে। এর সঙ্গে জেলার ১২৫টি সেক্টরে ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে। কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি), মহকুমা ও জেলাভিত্তিক স্ট্রাইকিং ফোর্স, স্ট্রং রুম পাহারা মিলিয়ে সর্বমোট ১৪৪ কোম্পানি বাহিনী থাকবে শুধু ঝাড়গ্রামেই। তার সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ২৬ জন ইনসপেক্টর, এসআই-এএসআই মিলিয়ে ৪০৫ জন, সশস্ত্র ও লাঠিধারী কনস্টেবল-হোমগার্ড-এনভিএফ ২০৮১ জন এবং ১৯২ জন মহিলা কনস্টেবল ঝাড়গ্রাম জেলার ভোটে নিযুক্ত হবেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তিন-চার বছরে কোনও জেলায় মাওবাদী দৌরাত্ম্য না থাকলে সেই জেলাকে আর ‘মাওবাদী’ তালিকাভুক্ত রাখা হয় না। সেই সূত্রে জঙ্গলমহলের জেলাগুলি সংশ্লিষ্ট তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। কিন্তু গত এক-দেড় বছর ধরে নানা সময়ে শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলায় মাওবাদী পোস্টারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই কারণে ভোটের এই সময় ওই জেলাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে কমিশনকে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় ৪৮ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং অন্তত ২২ হাজার রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করে প্রথম দফার ভোট-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের সব বুথেই হাফ সেকশন (৪ জন) করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ঝাড়গ্রাম বাদে অন্য জেলার কোনও ভোটকেন্দ্রে চারটি পর্যন্ত বুথ থাকলে আট জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান থাকবেন। যে ভোটকেন্দ্রে ৫ থেকে ৯টি বুথ থাকবে সেখানে ১২ জন এবং তার বেশি সংখ্যক বুথ থাকলে ১৬ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ান মোতায়েন হবেন। ওই জেলার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের সেক্টর অফিসে এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে। ভোটারদের লাইন দেখভালের জন্য হোমগার্ড, এনভিএফ অথবা রাজ্য পুলিশের কন্সটেবলদের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে সিভিক ভলান্টিয়ার অথবা গ্রিন পুলিশকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
সূত্রের খবর, কুইক রেসপন্স টিম ছাড়াও সেক্টর অফিসে কমপক্ষে এক প্ল্যাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। সেই দিক থেকে বাঁকুড়ার ১৩২৮টি বুথ নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কাজে ৮৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২০৮৯টি বুথ পাহারা এবং অন্য নিরাপত্তায় ব্যবহার হবে ১২৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। পূর্ব মেদিনীপুরের ২৪৩৭টি বুথ এবং ভোটের বাকি নিরাপত্তায় ১৪৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে। পুরুলিয়ার ৩১২৭টি বুথ এবং অন্য ভোট নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হবে ১৮৫ কোম্পানি বাহিনী।
সব মিলিয়ে এই দফার ভোটে ৩০টি বিধানসভা আসনের ১০ হাজার ২৮৮টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। কমিশন সূত্রের খবর, সামগ্রিক ভোট-নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশকে প্রায় সমগুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই দফার ভোট-নিরাপত্তায় ৬৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং অন্তত ২২ হাজার রাজ্য পুলিশ থাকবে। কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, কম সংখ্যায় বাহিনী কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কমিশনের সিদ্ধান্ত, ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে পৃথক ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। পরের দফার ভোটে বাহিনী পাঠানোর সময় আগের দফায় ভোট হওয়া এলাকাগুলির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য পুলিশের সঙ্গে থাকবে পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়া হবে।