চাঁপদানির সভায় আব্বাস সিদ্দিকি। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পা ভাঙার ঘটনা নিয়ে নাটক করছেন বলে অভিযোগ ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকির। সোমবার বিকেলে হুগলির চাঁপদানিতে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে এসে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পা নিয়ে নাটক করছেন। ব্যান্ডেজ বাঁধা পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে নাচাচ্ছেন। তাতে তাঁর মুখে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।’’
চাঁপদানির গুমোডাঙ্গায় আব্বাসের সভায় হাজির ছিলেন ওই বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক তথা কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান। ছিলেন, শ্রীরামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অলোকরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় মমতাকে খোঁচা দিয়ে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) প্রধান বলেন, ‘‘সামনে বাংলার জনগণ বসে আছে। তাদের দিকে পা! জেতালেও মুখে লাথি মারব, হারলেও মুখে লাথি মারব এমন ভাব তাঁর। যাঁরা এত বড় নাটক করেন, বাংলায় মানুষকে বোকা ভাবেন, তাঁরাই বোকা হবেন।’’
বিধানসভা ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আব্বাস বলেন, ‘‘পার্কে লেখা থাকে, ‘ফুলে হাত দেবেন না’। তেমনই ইভিএম-এ ঘাসফুল আর পদ্মফুলের বোতামে হাত দেবেন না। কিন্তু আমাদের হাত চিহ্নে হাত দিন, কোনও বারণ নেই। কাস্তে-হাতুড়িতে হাত দিন, কোনো বারণ নেই। ভাইজানের খামে হাত দিন কোন বারণ নেই। ওই হাত দিয়ে খামে চিঠি আসবে কর্মসংস্থানের। হাতুড়িতে শ্রমিকদের কাজ মিলবে।’’
আব্বাসের বক্তৃতায় নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনে পুলিশি অভিযানের প্রসঙ্গও এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম, নন্দীগ্রামে সিপিএম মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কী বললেন! নন্দীগ্রামের ঘটনা করেছেন, শুভেন্দু আর শুভেন্দুর বাবা। শুভেন্দু আর শুভেন্দুর বাবা তখন কোন দলে ছিলেন? সিঙ্গুরেও তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ডের পিছনে এদেরই হাত আছে। তৃণমূল ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। সিপিএমের একটাও লোককে ধরতে পারল না। প্র মাণ করতে পারল না। এখন বলছে, সিঙ্গুরে কারখানা করবে ২০ কাঠা করে জমিতে। সুযোগ দিলে তো। আমাদের নিয়ে যারা খেলা করে, তাদের আমরা মাফ করব না।’’
ফুরফুরা শরিফ প্রসঙ্গেও সোমবার তৃণমূলনেত্রীকে বিঁধেছেন আব্বাস। তিনি বলেন, ‘‘তুমি একগাদা ঢপ দিলে আর আমরা বিশ্বাস করলাম। ফুরফুরার তাবিজ দেখিয়ে দেখিয়ে বেড়ালে। আমার সব দাদাহুজুরের পাগলগুলো দিদি দিদি দিদি করছে। আমরা ভাবছি, এ তো আপনজন এসে গিয়েছে মনে হয়। ও বাবা আমার বাড়িতেই পুলিশ পাঠিয়েছে। আমি বাংলার নাগরিকদের সুপ্রিম কোর্টে যেতে বলেছি, এটা কি অন্যায় করেছি? তুমি যখন নেত্রী বলছ নিজেকে, নাগরিকদের এতোটুকু মেজাজ সহ্য করতে পারছ না। তোমার মত এরকম মানসিক সমস্যাকে আর আর একুশে দায়িত্ব দেব না।’’
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে প্রচারে গিয়ে ‘মিম’ প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এবং আব্বাসকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘হায়দরাবাদ থেকে বিজেপি-র এক বন্ধু এসেছে। সঙ্গে ফুরফুরার এক চ্যাংড়াকে নিয়েছে।’’ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট ভাগের চক্রান্তের অভিযোগে মমতার তির যে আইএসএফ-এর প্রধান আব্বাসের দিকে, সেটা স্পষ্টই ছিল বক্তব্যে। এর পরেই মমতাকে নিশানাকে করে আব্বাস বলেছিলেন, ‘‘উনি অহঙ্কারী, মানুষকে মানুষ মনে করেন না।’’ একই সঙ্গে আব্বাসের দাবি, ‘‘মুসলমানরা ওঁর (মমতার) সঙ্গে নেই বলেই উনি উল্টোপাল্টা বলছেন।’’