—ফাইল চিত্র।
শাসকদলের প্রার্থীকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর হুমকি দিয়ে রাখা নির্দল প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ঠিক কত ভোট কাটতে পারেন— লাভপুরে জোর চর্চা চলছে তা নিয়ে। কেউ কেউ আবার টিপ্পনি কেটে বলছেন, ‘‘কিছু দিন মনিরুল তৃণমূলের আগে ছিলেন কাঁটা। এখন চোরকাঁটা। কাঁটা তবু এড়িয়ে যাওয়া যায়। চোরকাঁটা কখন অলক্ষ্যে পোশাকে বিঁধে যায় টের পাওয়া দুষ্কর।’’ মনিরুল ইসলামের এহেন রূপান্তর শাসকদলকেও ভাবনায় রাখছে বলে এলাকায় চর্চা।
জেলা তথা লাভপুরের রাজনীতিতে মনিরুল চর্চিত নাম। এক সময় তিনি ছিলেন দাঁড়কা পঞ্চায়েতের ফরওয়ার্ড ব্লকের উপপ্রধান। সেই সময় উপরতলার নেতাদের শরিকি সম্প্রীতি রক্ষার হুইপ অগ্রাহ্য করে অন্য দলের সঙ্গে মিলে সিপিএমকে কোনঠাসা করেন। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১০ সালে নিজের বাড়িতে বালির ঘাটের সালিশিসভায় ডেকে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১১ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে লাভপুরের বিধায়ক হন। ২০১৬ সালেও ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন। তার পরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু, তাঁকে দলে নেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকায় তাঁকে এলাকার কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তবু লাভপুরে বিজেপির প্রার্থী করা হতে পারে বলে জল্পনা ছড়ায়। কিন্তু, জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে দল বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে প্রার্থী করে। তার পরেই মনিরুল নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিজেপির থেকেও তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে বেশি। তাঁদের ধারণা, ভোট কেটে বিজেপি প্রার্থীর সুবিধা করে দিতেই তাঁকে দাঁড় করানো হয়েছে। তাঁর বোলপুরের জামবুনির বাড়িতেও মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের একটি সূত্রও মানছে, সরাসরি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কত ভোট কাটতে পারে আন্দাজ পাওয়া যেত। কিন্তু, নির্দল প্রার্থী হিসেবে সেটা বোঝা মুশকিল। সেই সূত্রেই ঘুরছে চোরকাঁটার টিপ্পনিও।
ভোটের পরিসংখ্যানও তৃণমূলকে চিন্তায় রেখেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের মনিরুল ইসলাম, সিপিএমের সৈয়দ মাহফুজুল করিম এবং বিজেপির নির্মল মণ্ডল যথাক্রমে ১,০১,১৩৮, ৭০, ৮২৫ এবং ১৭,৫১৩টি ভোট পান। ২০১৯সালের নির্বাচনে তৃণমূলকে প্রায় ধরে ফেলে বিজেপি। সেবারে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে তৃণমূল ৯৪,৫১৪, বিজেপি ৯০,৭৩৬ এবং সিপিএম ৮,২৩১টি ভোট পায়। ওই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ২৬ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, দুটি নির্বাচনেই সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলের ঝুলিতে যায়। অনেকের মত, এবারে সেই ভোট মনিরুলের দিকে গেলে ক্ষতি তৃণমূলের।
মনিরুল অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমি বিজেপিকে জেতানোর জন্য ভোটে দাঁড়ায়নি। শাসকদলকে হারিয়ে নিজে জিতব বলে দাঁড়িয়েছি। সংখ্যালঘু ভোটও আমি পাব।’’ এমন দাবি উড়িয়ে তৃণমূলের অভিজিৎ সিংহের জবাব, ‘‘যাঁকে দু’বছরের অধিক সময় এলাকাতেই দেখা যায়নি তাঁকে সংখ্যালঘু কেন, অন্যরাও ভোট দেবেন না। আমাদের সরকার সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি সবার জন্য বহু প্রকল্প করেছেন। সেই সব দেখেই মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।’’ বিজেপির বিশ্বজিৎ মণ্ডলে দাবি, ‘‘মনিরুল ইসালামের সাহায্য লাগবে না। তৃণমূলের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা আমাদেরই সমর্থন দেবেন।’’ আর সিপিএম প্রার্থী সৈয়দ মাহফুজুল করিম জানিয়েছেন, মানুষ বিকল্প খুঁজছেন। মানুষ জানে সংযুক্ত মোর্চাই সেই বিকল্পের সন্ধান দিতে পারে।