তনুশ্রী, রাজ, সায়নী, যশ
হালখাতা, ভাল খাবার, নতুন জামাকাপড় আর আড্ডার সঙ্গে নববর্ষের সম্পর্ক চিরকালীন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাংলা বছরের প্রথম দিনের রুটিনে এহেন অনুষঙ্গের সংযোজন হবেই। কিন্তু এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে সেলেব প্রার্থীদের রুটিনেও কি থাকবে নিখাদ আড্ডার বা জমিয়ে খাওয়ার জন্য সময়? তাঁদের ব্যস্ততা যে তুঙ্গে!
একটু হলেও যেন মনখারাপের সুর যশ দাশগুপ্তের কণ্ঠে, ‘‘এ বারের নববর্ষে আরও বেশি করে মনে পড়ছে পুরনো সব কিছু। অন্যান্য বারের মতো বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তরাঁয় গিয়ে জমিয়ে খাওয়া সম্ভব নয়। যদিও আমার কেন্দ্রের নির্বাচন শেষ, কিন্তু দলের অন্য প্রার্থীদের প্রচারে রাতদিন ব্যস্ত। ২ মে পর্যন্ত সেলিব্রেশন তুলে রেখেছি,’’ বললেন যশ। প্রচারের কাজে আজ কলকাতার বাইরেও যেতে হতে পারে তাঁকে।
আজ পয়লা বৈশাখ যেমন সত্যি, তার চেয়েও বড় সত্যি বোধহয় করোনা। ‘‘নতুন বছর সব সময় নতুন কিছু নিয়ে আসে। আগামী দিন যেন সকলের সার্বিক সুস্থতা নিয়ে আসে, সেই প্রার্থনাই করব,’’ বলছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। বছরের প্রথম দিন টিটাগড়ে প্রচারের কাজ এবং অন্য দুই তৃণমূল প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিক ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলীয় বৈঠকে ব্যস্ত থাকবেন পরিচালক। আজকের দিনলিপিতে ছেলে ইউভান ও স্ত্রী শুভশ্রীর জন্য কোনও সময় নেই রাজের। কিন্তু তিনি সময় বার করতে না পারলেও, কাঞ্চন মল্লিক ছেলের জন্য খানিকটা সময় বার করে নিয়েছেন। ‘‘নববর্ষের জন্য আলাদা করে কিছু ভাবিনি। ছেলের জন্য নতুন জামা কিনেছি, সেটা দিয়ে আসব। আর ছেলের পছন্দ ভাত ও পাঁঠার মাংস থাকবে দুপুরের মেনুতে,’’ কাঞ্চন এ ভাবেই শুরু করছেন বাংলা বছরের প্রথম দিনটি।
নিজের জন্য খানিকটা সময় বার করেছেন তনুশ্রী চক্রবর্তীও। তাঁরও নির্বাচন কেন্দ্র শ্যামপুরের ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে অন্যান্যদের মতো তাঁকেও দলের অন্য প্রার্থীর প্রচারে সময় দিতে হবে। প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিমিত খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস করছেন সকলে। তবু নতুন বছরের প্রথম দিনে স্বাদবদলের ইচ্ছে তো হয়ই। বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়ার সুযোগ যখন নেই, তখন বাড়িতেই কি বিশেষ কোনও পদ রান্না হচ্ছে? ‘‘বাসন্তী পোলাও, মাছের কালিয়া, আমের চাটনি সঙ্গে মিষ্টি দই। এর চেয়ে বেশি ঝক্কি নিতে চাইছি না। আর এখন তো এক-একটা দিন যে ভাবে কাটছে, তাতে একটু অন্য রকম হলেই আমি খুশি,’’ স্বভাবসুলভ হেসে বললেন তনুশ্রী।
পরিবার-পরিজন তো রয়েছেই, কিন্তু এ বার দলীয় সদস্যদের সঙ্গে বছরের প্রথম দিনটি কাটাতে চাইছেন পার্নো মিত্র। ‘‘করোনা মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়ার নয়। তাই কোনও সেলিব্রেশন ছাড়াই নতুন বছরের উদ্যাপন করব,’’ বললেন তিনি। নতুন বছরকে এ বার অন্য ভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন সায়নী ঘোষ। ‘‘সকাল থেকে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দু’-আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান করছে বার্নপুরে। ওদের সঙ্গেই দিনটা কাটাব। একেবারে আলাদা অনুভূতি। তবে ভিডিয়ো কলে বন্ধুদের শুভেচ্ছা আর বড়দের প্রণাম জানাব,’’ ফোনের ও পার থেকে বললেন সায়নী। এমনই এক অন্য রকম অনুভূতির শরিক হচ্ছেন রুদ্রনীল ঘোষও। অভিনেতা বললেন, ‘‘অন্যান্য বছর বন্ধুদের সঙ্গে সেলিব্রেট করি। এ বার আমার নির্বাচন কেন্দ্র ভবানীপুর হওয়ায় মিশ্র সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখানে নববর্ষটা কেবল বাঙালির নয়, নানা প্রদেশের। তাই বছরের শুরুটা এমন এক পরিবেশে কাটানোর সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি।’’
নববর্ষের আনন্দ ও স্মৃতিমেদুরতার মাঝেই লাভলি মৈত্রের মনে উঁকি দিচ্ছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে এ বার নতুন বছরটি কিন্তু আসবে ২ মে।’’ তবে তিন বছরের মেয়ের জন্য নতুন জামা কিনেছেন। মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বাঙালি রেস্তরাঁয় রাতের খাওয়া সারতে যাবেন বলেই ভেবেছেন তিনি।
নববর্ষটা যেমনই কাটুক, সকলেই বলছেন আসল সেলিব্রেশন হবে ২ মে-র পরই। দেখা যাক, সে সৌভাগ্য ক’জনের হয়!