আড্ডা: তাহের, মইনুল, খলিলুর। নিজস্ব চিত্র।
হাসি, ঠাট্টা, আড্ডায় জমে উঠল জঙ্গিপুরে মঙ্গলের মনোনয়ন পর্ব। বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এদিন বিশাল কনভয় নিয়ে আসেন মনোনয়ন পত্র জমা দিতে।বাঁ পা’য়ের ক্ষত অপারেশনের পর থেকে পায়ে ইন্টারন্যাল ফিক্সেসন আঁটা থাকায় জাকিরের গাড়িকেই একমাত্র অনুমতি দেওয়া হয় এসডিও অফিসের সামনে পর্যন্ত যাওয়ার। সেখানেই গাড়ির মধ্যে বসে থাকেন তিনি দীর্ঘক্ষণ। সেই সময় মনোনয়ন জমা দিতে অফিসে ঢুকছিলেন ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। নেহাতই কাকতালীয় ভাবে। জাকিরকে গাড়িতে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। কাচ খুলে মুখ বাড়ালেন জাকিরও।
“কেমন আছ? আবার কলকাতার হাসপাতালে যেতে হবে? কবে যাবে? শরীর কেমন?’’ পাল্টা কুশল বিনিময় করলেন জাকিরও।
মইনুল বলছেন, “এক সময় গুরু শিষ্য সম্পর্ক ছিল। তখন রাজনীতিতে ছিল না জাকির। কতবার ওর বাড়ি গিয়েছি। ভিন্ন রাজনীতিতে থাকায় হয়ত দূরত্ব বেড়েছে। তবে এখনও ভাইয়ের মতই দেখি ওকে। পায়ের অবস্থা যা দেখলাম তাতে খুব খারাপ লাগল। একের পর এক অপারেশন। খুব কষ্ট তো পাচ্ছেই। ভাল আছে শুনে খুব খুশি হলাম।”
জাকির-মইনুল কুশল পর্বেই সেখানে হাজির তৃণমূলের দুই সাংসদ আবু তাহের ও খলিলুর রহমান। তাহের তৃণমূলের জেলা সভাপতি, খলিলুর দলের জেলার সর্বোচ্চ স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান। দুজনেই এসেছিলেন জঙ্গিপুরে জাকিরের মনোনয়নের তদারকি করতে। মইনুল, তাহের একসময় একই দলের বিধায়ক ছিলেন। তাহের দল ছাড়লেও মইনুল ছাড়ব ছাড়ব করেও শেষ পর্যন্ত ছাড়েননি। বিড়ি মালিক খলিলুর কংগ্রেস মনস্ক বরাবরই।
পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই মইনুলের অনুযোগ, “তোদের জন্য আজ প্রচুর ঘুরে আসতে হয়েছে আমাদের। ২৫ বছরের পুরোনো বিধায়ক। বয়স হয়েছে। সঙ্গে অত গাড়ি, লোকজন। কিন্তু তোদের সোজা পথে ঢুকিয়ে আমাদের ঘুরপথে ঢুকতে হয়েছে শহরের মধ্যে দিয়ে। বিরোধী হলামই বা। বয়স্ক বলে একটু খাতির তো করবি।” “আমাদের সঙ্গেও গাড়ি ও লোকজন কিন্তু কম ছিল না?” তাহেরের কথায় হো হো করে হেসে উঠলেন সবাই।
আড্ডা ভাঙাল স্ট্রেচার। গাড়ি থেকে নামিয়ে জাকিরকে স্ট্রেচারে শুইয়ে নিয়ে যেতে হবে অফিসের দোতলায়। সেখানেই জঙ্গিপুরের রিটার্নিং অফিসার খোদ এসডিও নীতু শুক্লার কাছেই মনোনয়ন পত্র জমা দিতে হবে জাকিরকে। স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে তা সিড়ি ভেঙে বয়ে নিয়ে যেতে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগালেন দলীয় কর্মীরাও। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠেই কোনওরকমে স্ট্রেচার থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে বসানো হল এসডিওর সামনের চেয়ারে। এসডিও হাত বাড়াতেই চেয়ার থেকে সামান্য উঠে তার হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন জাকির। ঘড়িতে তখন বেলা ১টা ২৩মিনিট।
এদিন গাড়ি বন্দি জাকিরকে রাস্তায় দেখে বহু পরিচিত মুখ এগিয়ে এসেছেন। নমস্কার করেছেন।
জাকির বলছেন, ‘‘আমি মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে ভালবাসি। দেড় মাস ধরে হাসপাতালে শয্যাবন্দি। আবার ফিরে যেতে হবে বৃহস্পতিবার।নির্বাচনেও থাকতে পারব না। ভোট দেব, হয়ত পোস্টাল ব্যালটে। জিতব, আশা তো আছেই। তবে এই সময় সকলের সঙ্গে থাকতে পারলে ভাল লাগত। তা আর হল কই ? এক বিস্ফোরণেই সব আনন্দ শেষ করে দিল।”