ফাইল চিত্র।
ভোটে জিতে যে বিজয় মিছিল করা যাবে না, কয়েক দিন আগেই তা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু জয়-পরাজয় তো গণনার পরে। তার আগে, ২ মে গণনা কেন্দ্রগুলিকে কার্যত দুর্গের চেহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বুধবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটগণনা কেন্দ্র নিয়ে যে-নির্দেশ এসেছে, তাতে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার জোগাড়। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, টনক নড়েছে। তবে একটু দেরিতে, এই যা!
এ দিনের নির্দেশিকায় কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বা দু’টি প্রতিষেধক নেওয়ার শংসাপত্র না-থাকলে কোনও প্রার্থী বা এজেন্টকে গণনা কেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হবে না। তবে গণনা কেন্দ্রে সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম বলবৎ হবে কি না, ওই নির্দেশে তা স্পষ্ট নয়। তবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর সূত্রে জানানো হয়, গণনাকর্মীদের টিকাকরণ আগেই হয়েছে। তাঁদের জন্য মাস্ক, ফেসশিল্ড ও হাতশুদ্ধির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। গণনার টেবিলগুলির মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব রাখা হবে। ফলাফল বোঝার জন্য বড় ডিসপ্লের পরিকল্পনা আছে। এক কর্তা জানান, প্রতিটি ঘরে সাতটি টেবিল রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বড় ঘর হলে ১৪টি টেবিল থাকবে। দূরত্ব-বিধি নিশ্চিত করেই। সিইও দফতরের কর্তারা এ দিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের নির্ধারিত বিধি পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্দেশ এসেছে, ২ মে-র ৪৮ ঘণ্টা আগে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী এজেন্টদের নামের তালিকা জমা দেবেন প্রতিটি কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারের কাছে। সঙ্গে দিতে হবে তাঁদের আরটিপিসিআর অথবা র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্ট। তাঁদের কারও যদি দু’টি প্রতিষেধক নেওয়া থাকে, তার শংসাপত্রও জমা দিতে হবে। প্রার্থী নিজেও এই নিয়ম থেকে বাদ যাবেন না। প্রার্থী বা এজেন্টের পরীক্ষা না-হলে জেলা নির্বাচনী অফিসারকে সেই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এজেন্টদের তালিকাভুক্ত কারও পজ়িটিভ রিপোর্ট এলে তাঁর জায়গায় অন্য এজেন্ট দেওয়া যাবে। তবে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে তাঁরও। গণনা কেন্দ্রে ঢোকার মুখে প্রত্যেক প্রার্থী ও এজেন্টের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর মাস্ক পরা, বর্মবস্ত্র পরা, জীবাণুমুক্ত করার মতো যে-সব নিয়মের কথা বলা হয়েছে, তা না-মানলে আইনত ব্যবস্থাগ্রহণের কথাও জানিয়েছে কমিশন।
কমিশনের নির্দেশের ভিত্তিতে প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্র, জেলা এবং রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করতে বলা হয়েছে সরকারকে। গণনা হবে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের দায়িত্বে নোডাল অফিসার হিসেবে থাকবেন জেলা নির্বাচনী অফিসার। তাঁকে সহায়তা করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের এক নোডাল অফিসারও থাকবেন। সব ধরনের কোভিড বিধি মেনে গণনা হচ্ছে কি না, তার জন্য প্রতিটি গণনা কেন্দ্রকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে শংসাপত্র নিতে হবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। কমিশনের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে সর্বস্তরে। এ দিনই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ফের সেই বিধির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব।
গণনা কেন্দ্রের বাইরে কোনও ধরনের জমায়েতও করা যাবে না বলে এ দিনের নির্দেশে জানানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, গণনা কেন্দ্রে পাশাপাশি দু’জন এজেন্টকে বসতে হলে এক জনকে পিপিই কিট পরে বসতে হবে। এর জন্য গণনা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বর্মবস্ত্র রাখতে হবে। প্রতিটি ভিভিপ্যাট জীবাণুমুক্ত করে তবে সিল খোলা হবে। গণনার আগে, পরে, গণনা চলাকালীনও গণনা কেন্দ্র ক্রমাগত জীবাণুমুক্ত করে যেতে হবে।
গণনা কেন্দ্র বড়, খোলামেলা এবং বাতাস খেলতে পারে, এমন হতে হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। প্রয়োজনে একের বেশি হলঘরে গণনার কাজ করতে হবে। এমনকি আধিকারিকেরা মনে করলে পোস্টাল ব্যালট গণনার কাজ আলাদা ঘরে করতে পারবেন।