সভায়: শিলিগুড়িতে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার মঞ্চে সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরী ও জেলা সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
দলে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের মধ্যেও ‘গদ্দার’ রয়েছেন, যাঁদের অনেকেই ভোটের পর গেরুয়া শিবিরে চলে যেতে পারেন বলে সম্প্রতি একটি প্রচার মঞ্চ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের আহ্বান, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যখন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তখন সেই তৃণমূলকে যেন কেউ ভোট না দেন। একই মঞ্চে একই সুর শোনা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মুখেও।
সোমবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের প্রচার সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা বলছি না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, যাঁরা তৃণমূলের প্রার্থী তাদের মধ্যেও গদ্দার রয়েছে। তারা ভোটে জেতার পর বিজেপিতে চলে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তা হলে তো তারা ভোটের পর বিজেপিকে সরকার গড়তে সাহায্য করবে। তা হলে সেই তৃণমূলকে একটিও ভোট নয় বলেই আমি আহ্বান জানাব।’’
তাঁর কথায়, ‘‘আগে তৃণমূল-বিজেপির বিকল্প ছিল না। এখন সংযুক্ত মোর্চা রয়েছে। তাদেরকে ভোট দিন।’’ আরএসএস এবং তৃণমূলকে নিয়ে সূর্যকান্তের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেও আরএসএসের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী আগে প্রতিবাদ করতেন না। তাদের তিনি দেশপ্রেমী আখ্যা দিয়েছিলেন। আর আরএসএস তাঁকে মা দুর্গার মতো বলতেন। এখন যখন গাড্ডায় পড়েছেন তখন একে অপরকে দোষারোপ করছেন।’’
এ দিন বাঘা যতীন পার্কের কর্মসূচি ছিল সংযুক্ত মোর্চার শিলিগুড়ি বিধানসভার প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির প্রার্থী দিলীপ সিংহ, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রার্থী শঙ্কর মালাকার এবং ফাঁসিদেওয়ার প্রার্থী সুনীল তিরকির প্রচার সভা।
বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে অধীর বলেন, ‘‘মোদী বলছেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারত। আর তৃণমূল বলছে বাম, কংগেসকে খতম করো, বিরোধী শক্তি রাখব না। দু’দলের মধ্যে কোনও ফারাক নেই।’’ তাঁর তোপ, ‘‘কেন্দ্রের জিএসটি নীতিতে ব্যবসায়ীরা কেউ লাভবান হননি। রামের দেশ ভারতে পেট্রল, ডিজেল মহার্ঘ। অথচ সীতার দেশ নেপাল, রাবণের দেশ শ্রীলঙ্কায় কম মূল্য। করোনা বর্ষপূর্তি হয়ে গেলেও প্রকোপ কমেনি। আরও ব্যাপক হারে বেড়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষ কী রকম অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সেই দৃশ্য সকলেই দেখেছেন। বহু মানুষ বেকার হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিকের ঠিকানা হয়েছে। অথচ এক সময় এই বাংলাতেই বাইরে থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে আসতেন।’’
ভোট লুটের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। প্রদীপের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি নিজেরাই বলছে অনেক জায়গায় তাদের সংগঠন নেই। তা হলে কিসের ভিত্তিতে বিজেপি বলছে ২০০টি আসন পাবে?’’ তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে টাকা ছড়ানো চলছে। হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করুন। ইভিএমের কারচুপি হতে পারে। সতর্ক থাকুন। ইভিএম পরীক্ষা করান। ইভিএমে যে চিপ ব্যবহার হয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তা কারচুপি হয় বলে শোনা যাচ্ছে। তাই রিটার্নিং অফিসারদের কাছে আপনারা দাবি করুন, যাতে প্রত্যেক বুথে জ্যামার থাকে।’’ সূর্যের কথায়, ‘‘ভোটের দিন সতর্ক থাকুন। মানুষের কাছে যাওয়া চাই। পোলিং এজেন্ট হলে বুকের পাটা রাখুন, ভোট লুঠ করতে দেবেন না।’’