West Bengal Assembly Election 2021

Bengal polls : ভোট-যুদ্ধের মাঝে করোনা সচেতনতার বার্তাও থাকুক

বঙ্গ-জীবনে প্রথম হানা দেয় করোনা। লন্ডন থেকে আসা ১৮ বছরের এক তরুণের শরীরে মেলে করোনাভাইরাসের সন্ধান। তার পরে হু-হু করে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভাইরাস।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

গড়িয়াহাট মোড়ে বাসের অপেক্ষা। কারও কারও মুখে মাস্ক নেই,কারও মাস্ক ঝুলছে গলার কাছে। দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বঙ্গ-জীবনে প্রথম হানা দেয় করোনা। লন্ডন থেকে আসা ১৮ বছরের এক তরুণের শরীরে মেলে করোনাভাইরাসের সন্ধান। তার পরে হু-হু করে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভাইরাস। মৃতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সংক্রমণ রুখতে ‘তালা-বন্ধ’ করে দেওয়া হয় নাগরিক জীবন।

Advertisement

২০২১-এর ১৭ মার্চ, বুধবার। শহরের রাস্তায় বেরোলে বোঝার উপায় নেই যে, ঠিক এক বছর আগে এই শহরটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল করোনার ভয়ে। এখানে করোনাভাইরাস নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, এ কথা কিন্তু এক বারও বলছেন না চিকিৎসকেরা। তা সত্ত্বেও ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে রাজপথ থেকে পাড়ার গলি— মাস্ক ছাড়াই সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। গণপরিবহণে গাদাগাদি করে সওয়ার হচ্ছেন অসংখ্য যাত্রী। বহু জায়গায় হাত স্যানিটাইজ় করার যন্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার করছেন ক’জন? সঙ্গে দোসর হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের জন্য রাজ্য
জুড়ে চলছে প্রচার-মিছিল, জনসভা। কিন্তু সেখানেও কার্যত উধাও করোনা-বিধি!

এ সব দেখে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। যে কোনও মুহূর্তে আসতে পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ!’’ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ করোনা-বিধিকে উপেক্ষা করছেন কেন? ধর্মতলা চত্বরে কেনাকাটায় ব্যস্ত মাস্কহীন এক যুবকের কথায়, ‘‘মিটিং-মিছিলে এত লোক ভিড় করছেন। প্রার্থী থেকে নেতা, অনেকেই মাস্ক পরছেন না। কই, তাতে তো কেউ আপত্তি করছেন না!’’ আবার অনেকে এটাও অভিযোগ করছেন, ‘‘প্রচারের সময়েও তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব মানুষকে সচেতন করতে করোনা-বিধি মানার কথা বলছেন না।’’

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন অবশ্য বার বারই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে করোনা সচেতনতার বার্তা দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে। যেমন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বললেন, ‘‘রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অবশ্যই জমায়েতকে অন্তত এক বার হলেও করোনার কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। কারণ, আমরা এই মুহূর্তে যেটুকু শ্বাস নিতে পারছি, তা যেন সাময়িক না হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করছেন। রাজনৈতিক নেতারাও যদি সেই দায়িত্ব না নেন, তা হলে
খারাপই হবে।’’

একই ভাবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন রেখেছেন চিকিৎসকদের একটি মঞ্চ। ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’-এর তরফে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘আগেও বিভিন্ন প্রতিষেধকের ব্যাপারে কিংবা অন্যান্য জনসচেতনতামূলক প্রচারে রাজনৈতিক নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তাই কোভিডের এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি সভার
শুরু এবং শেষে নেতারা যদি অন্তত এক বার করে করোনা-বিধি মেনে চলার বার্তা দেন, তা হলে খুবই
ভাল হয়।’’

ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একশোর ঘরে নেমে গেলেও মার্চের প্রথম থেকে ফের সেই সংখ্যা দুশোর উপরে উঠতে শুরু করেছে। কয়েক দিন আগেও যেখানে কোভিড হাসপাতালে দৈনিক তিন-চার জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছিলেন, এখন সেখানে আট-দশ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউ আসছে কি না, জানি না। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেটাই চিন্তার বিষয়। যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক তারকা প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা যদি করোনা-বিধি প্রচার করেন, সেটা জনমানসে অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।’’

কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, করোনা নিয়ে প্রচার তো দূর, বহু প্রার্থীকে মাস্ক পরতেই দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি-র চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য সোমনাথ সরকার বললেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যের। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা যখন তৈরি হয়েছে, তখন সকলকেই সচেতন হতে হবে। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। যদি দেখা যায়, তাঁরা করোনা-বিধি মানছেন, তবে
তো মানুষ মানবে।’’ কিন্তু সেই মানসিকতা কোথায়?

আর তাই চিকিৎসক থেকে আমজনতা, সকলেই বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রচারের সঙ্গে থাকুক করোনা-বিধি নিয়ে প্রচারও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement