প্রতীকী ছবি।
দুপুরে আনাজের জমিতে ছাগল চরানো নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গোলমালের সূত্রপাত। সোমবার রাতে সে ঘটনার রেশেই ধুন্ধুমার বাধল বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার সামনে। দু’পক্ষের মধ্যে চলল পাথর ছোড়াছুড়ি। সংঘর্ষে পেটে রড ঢুকে জখম হলেন এক তৃণমূল কর্মী। থানা চত্বরেই বিজেপি কর্মীদের হাতে মার খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের রবিলোচন গোপ।
ওই ঘটনায় মোট আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় বিজেপির পক্ষ থেকে একটি ও তৃণমূলের পক্ষ থেকে মোট তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনাটি থানা চত্বরের বাইরে ঘটেছে। থানার বাইরেই তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীরা সংঘর্ষের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন। ঝামেলার খবর পেয়েই পুলিশ জমায়েতকারীদের হটিয়ে দেয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা মঙ্গলবার বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। এলাকায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর টহল চলছে। আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা সকলেই ঝামেলার সময় থানার সামনের জমায়েত করেছিলেন। পৃথক ভাবে চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার দুপুরে মেজিয়ার তারাপুরের বিজেপি কর্মী চন্দ্র গোপের ঢেঁড়শ চাষের জমিতে এক তৃণমূল কর্মীর ছেলে ছাগল চরাচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, ছাগল ঢেঁড়শের চারা খেয়ে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা করে ওই তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে অন্যত্র যেতে বলা হয়। তাতে লেগে যায় রাজনীতির রং। শুরু হয় দু’পক্ষের গোলমাল।
বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন গিয়ে চন্দ্রবাবুকে মারধর করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ছাগল চরাতে যাওয়া তৃণমূল কর্মীর ছেলেকেই ঘিরে ধরে মারধর করেন বিজেপি কর্মীরা। ঘটনাটি নিয়ে সন্ধ্যায় মেজিয়া থানায় অভিযোগ জানাতে যান বিজেপি কর্মীরা। খবর পেয়ে খোঁজ নিতে মেজিয়া থানায় যাচ্ছিলেন রবিলোচনবাবু। তাঁর অভিযোগ, থানার সামনে যেতেই বিজেপি কর্মীরা ঘিরে ধরেন। রবিলোচনবাবুর দাবি, “থানার সামনে প্রায় দেড়শো বিজেপি কর্মী জমায়েত করেছিলেন। আমি যেতেই বিজেপি কর্মীরা আমার উপরে চড়াও হন। কোনও রকমে থানার ভিতরে ঢুকে পড়ি। তাতেও আমাকে ছাড়েননি ওঁরা। থানা প্রাঙ্গণে ঢুকে আমাকে মারেন। ঠেলে ফেলে দেন আমাকে। পায়ে ও হাঁটুতে চোট পাই। উপস্থিত পুলিশকর্মীরা এসে আমাকে বাঁচান। পরে জানতে পারি, মেজিয়া বাজারে এক তৃণমূল কর্মী বনমালি গোপের পেটে রড ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিজেপির কর্মীরা। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।” মঙ্গলবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল সূত্রের খবর, বনমালিবাবুর অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। মেজিয়ার বিজেপি মণ্ডল সভাপতি বিদ্যুৎ মিশ্রের দাবি, “থানার সামনে তৃণমূলের লোকজনের জমায়েত ছিল। আমাদের কর্মীরা কোনও তৃণমূল কর্মীকে মারধর করেনি। উল্টে পুলিশ অন্যায় ভাবে আমাদের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমরা চাই, প্রকৃত ঘটনার তদন্ত করে এই ঝামেলার সঙ্গে যুক্তদের শাস্তি দিক পুলিশ।”