এখানেই আটকে দেওয়া হয় সুনীল মণ্ডলকে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
জেলাশাসকের কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে মঙ্গলবার বেলায় তাঁকে নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক ও পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ‘বাধা’ পেয়ে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকের উদ্দেশে আঙুল উঁচিয়ে হুমকির সুরে কথা বলেছেন সাংসদ। গোটা ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে জেলা রাজনীতিতে।
জেলা নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে রিপোর্ট চাওয়া হবে। কমিশন তা খতিয়ে দেখবে।’’
এ দিন পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসকের দফতরে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব চলছিল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় রায়না কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে জেলাশাসকের দফতরে ঢুকেছিলেন আরও দু’জন। ওই সময় সুনীলবাবু কার্জন গেট থেকে মিছিল করে জেলাশাসকের কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই কার্যালয় সংলগ্ন নেতাজি মূর্তির কাছে কাছে বাঁশের ব্যারিকেডের বাইরে তাঁকে আটকায় পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকেরা তাঁকে জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কোনও প্রার্থীর সঙ্গে দু’জনের বেশি থাকতে পারবেন না। কার্যালয়ে ভিতরে থাকা দু’জনের মধ্যে এক জন বেরিয়ে এলে, সাংসদ মনোনয়ন কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন। এর পরে সাংসদকে ওই পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বলতে দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থলে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের এক আধিকারিক। তাঁর সঙ্গেও সাংসদ কথা বলেন বেশ কিছুক্ষণ। তার কিছুক্ষণ পরে, রায়নার বিজেপি প্রার্থী মানিক রায় ও দু’জন জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। তার পরে ওই কার্যালয়ের ভিতরে যান সাংসদ।
পরে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সুনীলবাবুর কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘ভোট তো এই ক’টা দিন। তার পরে তো নির্দেশ আমরা দেব। কোথাকার নির্দেশ কোথায় যায়, আমরা দেখব’। সাংসদের মুখে মাস্ক থাকায় তিনি-ই ওই কথাগুলি বলেছিলেন কিনা, তা-ও বোঝা যায়নি। যদিও তাঁকে হাত নাড়িয়ে কিছু বলতে শোনা গিয়েছে। ওই ভিডিয়োর প্রসঙ্গ তুলে সাংসদকে খোঁচা দিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের অভিযোগ, কমিশন ও পুলিশকে এই কথা বলে কার্যত ‘হুমকি’ দিয়েছেন সুনীলবাবু। দলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘এক জন সাংসদের ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার, রাজনৈতিক জ্ঞান নেই। কোথায় কী বলতে হয়, জানেন না। বিজেপি দলের শিক্ষাটাই সম্ভবত এই রকম।’’
কী ঘটেছিল? সুনীলবাবুর দাবি, ‘‘রায়নায় দলীয় প্রার্থীর কাগজপত্র ঠিক করার জন্যে ঢুকতে চাইছিলাম। কিন্তু বাধা দিচ্ছিল। এরা তো বাধা দেবেই। এক জন সাংসদ এলাকায় ঢুকতে পারছেন না! তা হলে রাজনীতির হালটা কোথায় পৌঁছেছে বুঝতে পারছেন? সকলকে সম ভাবে দেখা উচিত। সে রকম নির্দেশের কথাই বোঝাতে চেয়েছি।’’