চণ্ডীতলায় সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের সমর্থনে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় কোনও গেরুয়া ঝড় নেই। রাজ্যে প্রথম দু’দফার ভোটেই তাঁরা প্রায় সব আসন জিতছেন বলে দাবি করে বিজেপির নেতারা মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করতে চাইছেন বলে দাবি করল সিপিএম। আসন জয়ের সংখ্যা ঘোষণায় গলা মিলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির সব নেতারাই। বাকি পর্বের ভোটের আগে মানুষকে ‘প্রভাবিত’ করার লক্ষ্যেই তাঁরা এমন করছেন বলে মন্তব্য করে সিপিএমের পাল্টা দাবি, বিজেপির বিপদের সঙ্গে লড়াই করতে পারে সংযুক্ত মোর্চাই।
সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম শনিবার বলেছেন, ভোটের দুই পর্ব পেরিয়ে গেলেও এখনও মানুষের জীবনের মূল সমস্যাগুলো প্রধান দুই পক্ষের প্রচারে আসেনি। মোদী ও শাহ বারেবারে রাজ্যে এসে যে স্বপ্ন ফেরি করছেন, তাকে বিঁধে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘এখানে সোনার বাংলা গড়বেন! কেন্দ্রে ৭ বছর ধরে সরকার চালিয়ে বিজেপি কী করেছে? বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি প্রতিশ্রুতি দূরে থাক, যাদের কাজ ছিল, লকডাউনে তাদের অনেককেই ‘পিঙ্ক স্লিপ’ দেওয়া হয়েছে। তেল, রান্নার গ্যাস, জিনিসপত্রের দাম কোথায় আছে? মোদী-শাহকে আগে এ সবের জবাব দিতে হবে!’’
নন্দীগ্রামে সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে মীনাক্ষী। নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের মতে, গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার ‘আমরাই জিতছি’ বলে প্রচার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন। যাতে জনমানসে ধারণা তৈরি হয়ে যায় যে, বিজেপিই রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে। এক দিকে মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে কোনও পদক্ষেপ নেই, অন্য দিকে ত্রিপুরার মতো ভোটের আগে যেমন খুশি প্রতিশ্রুতির বন্যা আছে— এই বাতাবরণ ব্যাখ্যা করে সিপিএমের আবেদন, রাজ্যের মানুষ যেন বিজেপির ফাঁদে পা না দেন। নইলে তার চড়া মাসুল দিতে হবে বাংলাতেও।
ঘটনাচক্রে, যাদবপুরে লকডাউনের সময়ে চালু হওয়া বামেদের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের এক বছর পূর্তি হয়েছে এ দিনই। দুর্দিনে কারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা বুঝে নিয়েই ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সেলিম। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘হয় তৃণমূল থেকে লোক ধরে এনে অথবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভোটে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। তাদের নয়, মানুষ ভরসা করছেন সংযুক্ত মোর্চার উপরে।’’
আসন জয়ের কোনও পাল্টা সংখ্যা দাবি না করেই আলিমুদ্দিনে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘চৈত্রের গরমে তৃণমূল আইসক্রিমের মতো গলে যাচ্ছে! সিঙ্গুরে, তার পরে দিনহাটায় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, তাঁদের দলে এখনও ‘গদ্দার’ আছে, যারা পরে বিজেপিতে যেতে পারে। এঁদের ভরসায় বিজেপির মোকাবিলা কী ভাবে হবে? বিজেপির মোকাবিলা করতে পারে সংযুক্ত মোর্চাই।’’
আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ-কে তৃণমূল নেত্রী যে আক্রমণ করেছেন, সেই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতার জবাব, ‘‘সাম্প্রদায়িক কোনও শক্তির সঙ্গে আমরা হাত মেলাইনি। আর ফুরফুরা শরিফকে আলাদা করে যদি কেউ চিহ্নিত করে থাকেন, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ত্বহা সিদ্দিকিকে পাশে নেওয়া, ফুরফুরা পর্যন্ত রেললাইনের প্রতিশ্রুতি— এ সব কার করা? তৃণমূল ফুরফুরার কথা বলত, মোদী এখন এসে তারকেশ্বরের কথা বলছেন!’’