বরাহনগরের সভায় দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে এ বার বিতর্কিত মন্তব্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। বাড়াবাড়ি করলে রাজ্যের অন্য জায়গাতেও শীতলকুচির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে রীতিমতো হুঁশিয়ারি শোনা গেল তাঁর গলায়। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে শনিবার ৪ যুবকের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ওই ঘটনাকে রবিবার গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবিবারই দিলীপ বললেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করার দিন চলে গিয়েছে। ভয় উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। ১৭ তারিখ সকালেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিন। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। আমরা আছি। আর যদি বাড়াবাড়ি করে, শীতলকুচিতে দেখেছেন কী হয়েছে। জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’’ শনিবার থেকেই শীতলকুচির নিহতদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে তৃণমূল। আর দিলীপের কথায় নিহতরা ‘দুষ্টু ছেলে’। দিলীপের এই মন্তব্যকে গণহত্যায় প্ররোচনা বলে পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলের। এই মন্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মনে করছে তৃণমূল।
রবিবার দলীয় প্রার্থী পার্নো মিত্রর সমর্থনে বরাহনগরের জনসভায় দিলীপ আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে মা-বোনেরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না। মেয়েরা টিউশন গেলে চিন্তায় থাকে পরিবার। বাজারে গেলে মা-বোনেদের আঁচল ধরে, হাত ধরে টানা হয়। অভিযোগ করলে দিদি বলেন দুষ্টু ছেলে। এত দুষ্টু ছেলে এল কোথা থেকে? ওই দুষ্টু ছেলেরাই কাল কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলি খেয়েছে। এই দুষ্টু ছেলেরা বাংলায় থাকবে না। সবে শুরু হয়েছে। যারা ভেবেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী বন্দুকটা দেখোনার জন্য নিয়ে এসেছে, তারা বুঝে গিয়েছে ওই গুলির গরম কেমন। সারা বাংলায় এটা হবে।’’
শীতলকুচির ঘটনার পরই মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল তৃণমূল নেত্রীর। কিন্তু ৭২ ঘণ্টার জন্য সেখানে রাজনীতিকদের প্রবেশ নিষেধ করেছে কমিশন। যে কারণে রবিবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন ভিডিয়ো কলে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। তা নিয়েও মমতাকে আক্রমণ করেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘‘সারাজীবন লাশের রাজনীতি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহারে লাশ তুলতে যেতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, রাস্তায় লাশ ফেলে বসবেন। বলবেন, ‘দেখুন, আমার লোকেদের মেরেছে। ভোট দিন।’ কিন্তু কমিশন ঠিক করেছে, ওই উপদ্রুত এলাকায় কোনও নেতা-নেত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না, যাতে কেউ আগুন জ্বালাতে না পারেন। তাই খুব কষ্ট হচ্ছে। শিলিগুড়িতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছেন। উনি বুঝতে পেরেছেন, মানুষ ভোট দেবেন না।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভোট করান, সমাজবিরোধীদের নেতা বানান বলেও অভিযোগ করেন দিলীপ। কিন্তু তাঁর মতে, মানুষ আর তৃণমূলকে ভয় পাচ্ছে না। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন। দিলীপের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘শীতলকুচি একটা কলঙ্কজনক ঘটনা। বিজেপি-র চিত্রনাট্য মেনেই গোটাটা ঘটেছে। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন চোখ কান বুজে আছে। আমার মনে করি দিলীপ ঘোষেই মন্তব্য আসলে গণহত্যার প্ররোচনা। অবলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত কমিশনের।’’ এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষের কথার প্রতিক্রিয়া দেওয়া যায় না। ওঁরা বিভাজনের কৌশল নিয়েছে। তাই এ ধরনের কথা বলছেন। মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন।’’