সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক থেকে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে শীতলকুচির নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের অভিযোগ শুনলেন তিনি। সব অভিযোগ শোনার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যা বিচার চাওয়ার চাইব।’’ প্রথমে তিনি ভিডিয়ো কলে নিহত মনিরুজ্জামান মিয়াঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। বাড়ির লোক মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “মনিরুজ্জামানের ৪৫ দিনের একটি কন্য়া সন্তান আছে। স্ত্রী, বাবা-মা এবং ছোট ভাই রয়েছে। মনিরুজ্জামান রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ভোটের জন্য কেরল থেকে বাড়ি এসেছিলেন। বুথের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। কোথা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। আমরা এর বিচার চাই।” মুখ্যমন্ত্রী তা শুনে বলেন, ‘‘পরিবারকে সব রকম সাহায্য করা হবে। এখন যেতে পারছি না। কিন্তু আমি যাব। আপনাদের সঙ্গে দেখা করব। যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁদের তো ফেরাতে পারব না। তবে, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছি।’’
মনিরুজ্জামানের বাড়ির লোকের পাশেই ছিলেন নিহত আরও এক ব্যক্তি হামিদুল মিয়াঁর দাদা। মুখ্যমন্ত্রীকে ভিডিয়ো কলে তিনি বলেন, ‘‘হামিদুলের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। একটি তিন বছরের কন্যাও রয়েছে। হামিদুলও রাজমিস্ত্রির কাজ করত। ওর মৃত্যুতে আমরা দিশাহারা। আমরা এর বিচার চাই।” এই কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী খানিক চুপ করে যান। কিছুক্ষণ থেমে বলেন, ‘‘আমি যে ভাবে পারি সাহায্য করব। ওখানে গিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা করব। যা বিচার চাওয়ার চাইব। যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁকে তো ফেরাতে পারব না। তবে আমরা ওঁদের পরিহারকে সাহায্য করব। আমি ১৪ তারিখ যাওয়ার চেষ্টা করছি। তখন দেখা করব।’’
রবিবার শিলিগুড়ির সিন্ডরেলা হোটেল থেকে সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই মমতা বলেন, “শীতলকুচিতে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার পর আমাকে আটকাতেই ওখানে কাউকে না যেতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুলিকাণ্ডের পরে তথ্য লুকোতে ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা।’’ খানিক থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে কেন্দ্রীয় বাহিনীই গুলি করে সাধারণ লোককে মেরেছে। তার পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা নজিরবিহীন। এতগুলোর লোকের রক্ত আমাকে মর্মাহত করছে। আমি যদি মনে করি আমি কিছু করব, তা হলে তা করবই।’’
নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর মমতা বলেন, ‘‘আমি শীতলকুচি না গিয়েও কিন্তু শীতলকুচিতেই রইলাম। নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম। আমি আবারও বলছি, মৃতের পরিবারের সব দায়িত্ব আমার।’’ এর পরই বলেন, ‘‘কী হল, আমাকে আটকানো গেল? কী হত ওখানে গেলে? একটু গর্ভবতী মেটার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারতাম। তিন বছরের বাচ্চা মেয়েটার একটু মাথায় হাত দিতে পারতাম।’’