স্মিতা বক্সী, মালা সাহা ফাইল চিত্র।
কলকাতার আবহাওয়ায় ঝড়ঝঞ্ঝার কোনও দুর্যোগ নেই। তবে থমথমে গুমোট। শুক্রবার দুপুরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে এটাই শহরের ছবি। কলকাতার বাইরে নানা বিক্ষোভ দেখা গেলেও বঞ্চনার মেঘ এখানে বৃষ্টি হয়ে ঝরেনি। তবে অভিমান গাঢ়। কারণ, কলকাতার অন্দরে যে দু’জন বিদায়ী বিধায়ক টিকিট পাননি, সেই দুই নারীই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুঃসময়ের সঙ্গী।
২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ২৩৫ আর ৩০-এর বিধানসভায় তখনকার বেলগাছিয়া পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক মালা সাহা। গোটা রাজ্যে স্রোতের উল্টো পিঠে দাপুটে বাম নেতা রাজদেও গোয়ালাকে হারিয়ে মালা তখন ‘জায়ান্ট কিলার’ আখ্যা পাচ্ছেন। কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর, তৃণমূলের আদি যুগের সৈনিক তথা মালার স্বামী তরুণ সাহা রাখঢাক না-করেই বলছেন, “এই অপমান আমাদের প্রাপ্য ছিল না!” তিন বারের বিধায়ক মালার স্বরেও বিষাদ: “কখনও কারও কাছ থেকে পাঁচ নয়া পয়সা নিইনি। কোনও লোভে পা বাড়াব না। আর কিছু বলছি না। আমি শিক্ষিকা। ভদ্রতা আমার অলঙ্কার।”
তৃণমূলের সূচনার পর্বে মমতার সহযোগী, ১৯৯৮ থেকে যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় বক্সীর স্ত্রী, জোড়াসাঁকোর দু’বারের বিধায়ক স্মিতা বক্সীও এ দিন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। স্মিতা-সঞ্জয়ের পুত্র, যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য বক্সীই এ দিন মায়ের হয়ে কথা বললেন। তাঁর কথায়, “আমাদের পরিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুরুর দিনের সৈনিক। দিদির যে কোনও সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নেব।” তিনিই জানালেন, সন্ধ্যায় গিরিশ পার্কে দলের স্থানীয় অফিসে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেই মা (স্মিতা) ব্যস্ত। কিন্তু কেউ অন্য দলে টানলে কী করবেন স্মিতা? “সেটা পরিস্থিতির ব্যাপার,” মায়ের হয়ে এটুকুই বলছেন সৌম্য।
২০২১-এর ভোটে ‘টিম মমতা’ থেকে স্মিতা বা মালার বাদ পড়া প্রসঙ্গে মমতা নিজেই সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গত বার কঠিন লড়াইয়ে বিজেপি-র রাহুল সিংহকে হারান স্মিতা। তবে অ-বাংলাভাষী অধ্যুষিত কেন্দ্রে এ বার প্রার্থী হিন্দি সংবাদপত্রের মালিক বিবেক গুপ্ত। স্থানীয় পরিস্থিতি বুঝেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন মমতা। আর মালার বিষয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘উনি কিছুটা অসুস্থ।’’
এখানেই আরও ঘন হচ্ছে অভিমানের মেঘ। তরুণ বলছিলেন, ‘‘২০০৫-’০৬ সালে কেশপুরে দিদির কাজ করতে গিয়েই মালা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন। উনি ষাটোর্ধ্বা। একটু জোরে হাঁটতে সমস্যা আছে। আর একটু সৌজন্য থাকা উচিত ছিল।’’ স্মিতার পুত্র সৌম্য বা তরুণ-মালারা বলছেন, নেত্রীর ঘোষণার আগে প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত তাঁদের কেউ জানাননি।
সম্ভাব্য বদলের আঁচ পেয়ে উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের সংগঠনের নেতা তথা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে মালা-শিবির। তাঁরা বুঝে যান, এ বিষয়ে ওঁর কিছু করার নেই। যা পরিস্থিতি, তাতে ভবিষ্যতে দল করবেন কি করবেন না, এখনও পুরোটা নিশ্চিত নয় তরুণের কাছে। তবে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষ এ দিন তরুণকে ফোন করেন বলে জানা গিয়েছে। অতীনও তৃণমূলের শুরুর সময় থেকে মমতার সহযোগী। নিদেনপক্ষে বিধায়ক পদ না-পেলে তিনি দল ছাড়তে পারেন, তৃণমূলের ভিতরের খবর ছিল এমনই। সেই কারণেই নাকি প্রার্থী করা হয়েছে অতীনকে। কিন্তু দলটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরের অঙ্গুলিহেলনে চলছে বলে তৃণমূলের বঞ্চিত-মহলে হতাশার সুর।
এখনই বিস্ফোরণ নেই, তবে কলকাতার আকাশেও অভিমানের নিম্নচাপ।