ফাইল চিত্র।
বলা হয়, বীরভূমে তাঁর কথাই শেষ কথা। সে কথা বিজেপি-ও বিলক্ষণ জানে!
শেষ দফা ভোটের আগে বিজেপির পাখির চোখ বীরভূম। আর তাই তাদের আক্রমণের নিশানায় সে জেলার ‘শেষ কথা’ অনুব্রত মণ্ডল। কখনও তাঁকে ‘গুন্ডা’ বা ‘তোলাবাজ’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে, কখনও বা ভোটের পরে জেলে পোরার হুঁশিয়ারি। বীরভূমে ভোটের আগে এ ভাবেই অনুব্রতকে ‘চাপ’-এ রাখার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব—এমনই অভিযোগ তৃণমূলের।
রবিবার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী রামপুরহাট, হাঁসন, ময়ূরেশ্বর কেন্দ্রে প্রচারে আসেন। সেখানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করে তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের বিধি মেনে ৫০০ লোকের আসন নিয়ে সভা করার অনুমতি আছে। কিন্তু, এখানকার রিটার্নিং অফিসার ৩০০ লোকের অনুমোদন দিয়েছেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এরা ভাবছে এখানকার যিনি ছোট মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তাঁকে সন্তুষ্ট করা যাবে। আরে সেই মোটা মুখ্যমন্ত্রীর তো আয়ের হিসেব চেয়ে আয়কর দফতর চিঠি করেছেন। ছোটাছুটি
লেগে গিয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে ক’দিন আগেই আয়কর দফতরের নোটিস পেয়েছেন অনুব্রত।
দিন কয়েক আগে ইলামবাজারে এসে শুভেন্দু অনুব্রতের নাম না করে তাঁকে ‘মোটা তোলাবাজ’ বলেছিলেন। নদীর বালি চুরি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘এখানে এক জন তোলাবাজ আছে, মোটা তোলাবাজ। আর সঙ্গে তোলাবাজ আছে কলকাতার ভাইপো। গাড়ির প্যাড দেখায় আর পুলিশ ছেড়ে দেয়। পুলিশের কিছু করার নেই।’’ এ দিনই জেলায় প্রচারে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, ‘‘যেমন যেমন সাইজের নেতা, তেমন তেমন জেল। পঞ্চায়েত স্তরের নেতা সিউড়িতে থাকবেন। এমএলএ, জেলা পরিষদের নেতা দমদম সেন্ট্রাল জেলে এবং এমপি, মন্ত্রী হলে একটু দূরে, জগন্নাথ এক্সপ্রেসে বসিয়ে পাঠিয়ে দেব জগন্নাথ দর্শনে। যেমন ভারী নেতা, তাঁর সে রকম ব্যবস্থা।’’
একই সুরে শনিবার বোলপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি অনুব্রতের নাম না করে বলেছিলেন, ‘‘এখানে
এক জন গুন্ডা ভাই আছেন। তাঁকে বলতে চাই, ২ মে-র পরে তৃণমূলের প্রতিটা গুন্ডাকে জেলে ঢোকাব। গুন্ডা ভাই নির্বাচনের পরে তুমি জেলে থাকবে। আর আমরা বাইরে থেকে নমস্কার করব।’’
২০১৬ সালের মতো এ বারও অনুব্রতেক নির্বাচন কমিশন ‘নজরবন্দি’ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই শনিবারই বোলপুরের কর্মিসভা থেকে তাঁকে সতর্ক করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নজরবন্দি’ হলে অনুব্রতকে আদালতে যাওযার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে শেষ দফা ভোটের আগেই অনুব্রতকে ঘিরেই পারদ চড়ছে বীরভূমের ভোট-রাজনীতির।
এ দিন অনুব্রতকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর নিরাপত্তারক্ষী ফোন ধরে জানিয়েছেন, ‘দাদা’ মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে, জেলা তৃণমূলের নেতা তথা বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘ভোটে হারার ভয়েই ওরা এই ভাবে আক্রমণ করছে। ওদের পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছে বলেই এ রকম করছে। সাহস থাকলে নাম নিচ্ছে না কেন?’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। ওদের যা সংস্কৃতি, তাতে এটাই ওদের মানায়।’’