প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগে এ রকমই এক ভোটের সময়ে দুঃসংবাদ টলিয়ে দিয়েছিল পরিবারটিকে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় বিজেপির মিছিলে গিয়ে খুন হন রানিবাঁধের পুনষ্যা গ্রামের দলীয় কর্মী অজিত মুর্ম। রবিবার বাঁকুড়ার সভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে অজিতবাবুর নাম শুনে আপ্লুত নিহত অজিতবাবুর স্ত্রী উর্মিলা মুর্মু।
এ দিন সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়ে বলেন, ‘‘দিদি আর ওঁর সরকার ১০ বছরে সারা পশ্চিমবঙ্গে কেমন খেলেছেন, এই গোটা এলাকা তার প্রমাণ। অজিত মুর্মুর মতো আমাদের অনেক আদিবাসী সঙ্গী তৃণমূলের খেলার জন্য শহিদ হয়েছেন।’’
ওই সভায় ছিলেন উর্মিলাও। তিনি বলেন, ‘‘আমি হিন্দি ভাল বুঝি না। তবে এ দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখে আমার স্বামীর খুনের জন্য তৃণমূলই যে দায়ী, সে কথা অল্প হলেও বুঝতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। দলের প্রতি আমার ভরসা আছে। আমার বিশ্বাস, রাজ্যে তৃণমূলের পরাজয় ঘটবে। ২০২১ সালেই আমার স্বামীর খুনিরা শাস্তি পাবে।’’ যদিও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা রাইপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুর দাবি, ‘‘তৃণমূল খুনের রাজনীতি করে না। আমরা উন্নয়নের পক্ষে। বিজেপির গোষ্ঠিদ্বন্দ্বে অজিত মুর্মু খুন হয়েছেন।’’
প্রধানমন্ত্রীর মুখে স্বামীর নাম শুনে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও উর্মিলার আক্ষেপ, তাঁর স্বামীর খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত বিদ্যুৎ দাস তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। উর্মিলা এ দিনও অভিযোগ করেন, ‘‘প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছিলাম, আমার স্বামীর মৃত্যুর পিছনে সেই সময়কার জেলা যুব তৃণমূল নেতা বিদ্যুতের হাত রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার সময়ে রানিবাঁধ বাজারে প্রকাশ্য দিবালোক নির্মম ভাবে পিটিয়ে খুন করা হয় আমার স্বামীকে। তাই বিদ্যুৎবাবুকে দলে নেওয়ায় দিন থেকেই তাঁকে বহিষ্কারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি।’’
মাসখানেক আগে কলকাতায় হেস্টিংসে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন বিদ্যুৎ। তারপরেই বিদ্যুৎকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়েন রানিবাঁধ ব্লকের বিজেপি কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁরাও হেস্টিংসের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিদ্যুৎকে বহিষ্কারের দাবিতে ধর্নায় বসেন। নেতৃত্ব বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা ফিরে আসেন।
বিদ্যুৎ অবশ্য আগাগোড়া ওই খুনের ঘটনায় তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নয় বলে দাবি করে এসেছেন। দাবি করে এসেছেন, প্রকৃত তদন্ত হলেই ওই খুনে কে অভিযুক্ত তা সামনে আসবে। এ দিন তাঁর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও ধরা যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের।
বিজেপির রানিবাঁধ উত্তর মণ্ডলের সভাপতি অভিজিৎ মণ্ডল ও দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি গুরুপদ মাহাতো বলেন, ‘‘এ দিনের সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে অজিত মুর্মু খুনের প্রসঙ্গ শুনে বিজেপির সকল কর্মী-সমর্থকেরা আশ্বস্ত হয়েছেন, যে অন্যায় বন্ধ হবে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে।’’