নন্দীগ্রামে বিক্ষোভ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির।
নন্দীগ্রামে ফিরল ২০০৭ সালের জমি আন্দোলনের সেই স্মৃতি। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানার, কালো পতাকা হাতে শয়ে শয়ে পুরুষ-মহিলা ফের নন্দীগ্রাম জুড়ে সামিল হলেন প্রতিবাদ মিছিলে। তবে সেই সময় তাঁদের প্রতিবাদের নিশানা ছিল রাজ্যের তৎকালীন শাসক বামেরা। আর এখন বিক্ষোভের লক্ষ্য, সদ্য-প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।
এক সময় যে শুভেন্দু ছিলেন নন্দীগ্রামের নয়নের মণি, আজ তিনিই এখানকার মানুষের একাংশের কাছে শত্রু। জমি আন্দোলনকারীদের তৃণমূলপন্থী অংশের অভিযোগ, শুভেন্দুর ইন্ধনেই আবারও তুলে আনা হয়েছে জমি আন্দোলনের মামলাগুলিকে। যার জেরে নির্বাচনের মুখে বর্তমান তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে হলদিয়ার আদালত।
বুধবার দিনভর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের প্রতিটি অঞ্চলে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে। এ ছাড়াও নন্দীগ্রাম সদরেও ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি একটি বড়সড় মিছিল করে। তবে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে আয়োজিত মিছিলগুলিতে দেখা গিয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরই।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে একলপ্তে নন্দীগ্রামের সাড়ে ১২ হাজার একর জমি নিয়ে মেগা কেমিক্যাল হাব গড়ে তুলতে চেয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সংস্থা সালেম গোষ্ঠী। সেই প্রকল্পের বিরোধিতা করেই নন্দীগ্রামে গড়ে উঠেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। প্রায় এক বছর ধরে চলা এই আন্দোলনে নন্দীগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রাণহানি হয়েছিল বহু মানুষের। শতাধিক মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে কেবলমাত্র জমি আন্দোলনকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, উল্টোদিকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তৎকালীন শাসক পক্ষ বামেদের বহু নেতা-কর্মীরও। যার জেরে দুই তরফেই একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল নন্দীগ্রাম ও খেজুরি থানায়।
রাজ্যের ক্ষমতায় আসার সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন তিনি জমি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া শতাধিক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। যদিও বেশ কিছু মামলার অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় সেগুলি তুলে নিতে অনেকটা সময় লেগে যায়।
২০২০ সালে তুলে নেওয়া এমনই ৬টি মামলা (নন্দীগ্রাম থানার কেস নং ১৮৮/০৭, ৭৫/০৭, ৮০/০৭, ২২১/০৭, ১৫৬/০৭ এবং ১১১/০৯) তুলে নেওয়ার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে পিআইএল দাখিল করেন বিজেপি নেতা নীলাঞ্জন অধিকারী। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলাগুলিকে পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর হলদিয়া আদালত এই মামলাগুলিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর ফলে সামনের সারিতে থাকা জমি আন্দোলনের নেতা শেখ সুফিয়ান (মমতার নির্বাচনী এজেন্ট), আবু তাহের, স্বদেশ দাসের গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, যাঁরা প্রত্যেকেই এখন তৃণমূলে রয়েছেন।
এই ঘটনার জেরেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। যিনি এক সময় ছিলেন নন্দীগ্রামের কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের ‘মুখ’। বুধবার আবু তাহের বলেন, ‘‘জমি আন্দোলনকে অসম্মান করেছেন শুভেন্দু। এক সময় বাম সরকার জমি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল, সেগুলো তুলে নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অথচ সেই মামলাকেই হাতিয়ার করেছেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের মানুষ বুঝেছে, শুভেন্দু নিজের স্বার্থের জন্যই এখানে এসেছিলেন। নির্বাচনে মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবেন।’’