প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বিধানসভায় তাদের কোনও প্রতিনিধি থাকছেন না। মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় তৃণমূল তো বটেই, বিজেপিও আসন জিতেছে কিন্তু কংগ্রেসের ফল শোচনীয়। এমন পরাজয় মেনে নিয়েও বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শূন্য হয়ে গিয়েছি। কিন্তু বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ ও ভালবাসা, তাঁরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় বসতে দেননি। তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই।’’ সেই সঙ্গেই অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা শূন্য হয়েছি কিন্তু শেষ হয়ে যাইনি। আবার মানুষের কাছে যাব, তাঁদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। আগে যা পরিশ্রম করেছি, তার চেয়ে আরও বেশি করব।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ব্যাখ্যা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় সিংহভাগ সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেস পেত। এ বার সেই মুসলিম ভোট পুরোটাই গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। আবার হিন্দু ভোট চলে গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। গত লোকসভা ভোট থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল, তা এ বার আরও প্রকট। অধীরবাবুর মতে, বিজেপির আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পারবেন মমতাই, এই বিশ্বাস থেকে মুসলিম ভোট পুরোপুরি ঘুরে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। শীতলখুচির বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার মুসলিম যুবকের মৃত্যুর পরে এই মেরুকরণ আরও তীব্র হয়েছে। আর অন্যত্র মমতার জনমোহিনী নীতি এবং প্রশান্ত কিশোরের কৌশল তৃণমূলকে ফায়দা দিয়েছে।
অধীরবাবুর সুরই শোনা গিয়েছে দিল্লিতে মঙ্গলবার এআইসিসি-র মুখপাত্র শক্তি সিংহ গোহিলের কথাতেও। তিনি বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রে সুলতান, উজির কেউ হয় না। জনতাই জনার্দন। বিজেপির নেতারা যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সব ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলায় সুলতান হতে চেয়েছিলেন, রাজ্যের মানুষ সেই অহঙ্কারের জবাব দিয়েছেন। বিজেপিকে হারাতে তাঁরা তৃণমূলকেই সমর্থন করেছেন।’’ কংগ্রেসের ফল কী ভাবে এক খারাপ হল, দল তার পর্য়ালোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন এআইসিসি নেতা।
পৃথক দল তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে ১৯৯৮ সালে প্রথম ভোটে কংগ্রেস ধাক্কা খেতেই ফল ঘোষণার সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। সেই উদাহরণ সামনে এনে এখন অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, নজিরবিহীন ভরাডুবির পরে অধীরবাবুও কেন ইস্তফা দেবেন না? অধীরবাবু অবশ্য একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমি এই পদ চাইতে যাইনি। ম্যাডাম (সনিয়া গাঁধী) যখন নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখন ‘না’ বলার ক্ষমতা আমার ছিল না। এআইসিসি নেতৃত্ব যদি মনে করেন আমাকে সরিয়ে দেবেন, যে কোনও সময়েই সেটা করতে পারেন।’’ আরও পরিশ্রমের কথা বললেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অবশ্য এখনও করে উঠতে পারেননি অধীরবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত অসম্মানজনক পরাজয় হয়েছে। বিধানসভার ফল ধরলে এই মুহূর্তে আমাকে প্রাক্তন সাংসদও বলা যায়!’’