বড়জোড়ার তাজপুরে বিজেপির পুড়ে যাওয়া পার্টি অফিস। নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাঁকুড়ার বড়জোড়ার পখন্না পঞ্চায়েতের তাজপুর।
বিজেপির অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাজপুরে তাদের দলীয় কার্যালয় বোমাবাজি করে পুড়িয়ে দেয় তৃণমূলের ছেলেরা। হামলায় গুরুতর আহত হন এক বিজেপি কর্মী। অন্য দিকে, তৃণমূলের অভিযোগ ওই দিন বিকেল থেকেই রাজমাধবপুর ও পখন্নায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায় বিজেপির লোকজন। আহত হন দুই তৃণমূল কর্মী। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। ওই ঘটনায় রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে। হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কে, বড়জোড়া চৌমাথা অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতের ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট-মার্চ করছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’ এ দিন বাঁকুড়া আদালতে ধৃতদের তোলা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ জন অভিযুক্তের মধ্যে তিন জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত এবং দু’জনের চার দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে।
শনিবার তাজপুরে গিয়ে দেখা যায়, আগের রাতের গোলমালের জেরে গ্রাম থমথমে। রাস্তাঘাটে লোকজন খুব কম। মোড়ে-মোড়ে মোতায়েন রয়েছে আধাসেনা। বিজেপির পুড়ে যাওয়া পার্টি অফিস লাগোয়া বাগদিপাড়ার ঝুমা বাগদির অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতে এলাকায় ভোট হয়নি। লোকসভাতে ভোট দিতে বাধা দিয়েছিল তৃণমূল। অনেক দিন আমরা ভোট দিতে পারিনি। এ বার ভোট দিয়েছিলাম। সেই রাগেই পাড়ার বিজেপি পার্টি অফিসে লাঠি, টাঙি, বোমা নিয়ে আক্রমণ করে তৃণমূলের লোকেরা। বোমা মেরে পার্টি অফিসের খড়ের ছাউনি জ্বালিয়ে দেয়। বিজেপির ছেলেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের উপরে চড়াও হয় ওরা।’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বাগদির দাবি, ‘‘মহিলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাত হলেই ভয় লাগছে। পার্টি অফিসের আগুন পাশের ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। এমন অশান্তির মধ্যে কী করে বাঁচব?’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তির অভিযোগ, তাঁদের কর্মী শান্তি বাগদির মুখে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যদিও বড়জোড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা তৃণমূলের ওই কেন্দ্রের প্রার্থী অলক মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার বিকেলে বিজেপির সশস্ত্র লোকজন আমাদের রাজমাধবপুরের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা আমাদের দুই কর্মী গোপী ক্ষেত্রপাল ও বাপন ক্ষেত্রপালের মাথায় ধারাল অস্ত্রের কোপ মারে। দু’জনকেই বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এর পরে বিজেপির লোকজন পখন্নায় আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই তাজপুরের পার্টি অফিস পুড়েছে। আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’
যদিও বিজেপির বড়জোড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায় সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘বিজেপি শান্তি চায়। আমরা কোথাও আক্রমণ করিনি। আমাদের লোকেরাই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আমরা
দুর্বল নই।’’
এ দিন বেলা ১১টা থেকে বিজেপি কর্মীরা সুজিত অগস্তি ও সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বড়জোড়া চৌমাথায় অবরোধ শুরু করেন। চারটি রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ গিয়ে আশ্বাস দেওয়ায় আধ ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। অন্য দিকে, তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, ‘‘অন্যায় ভাবে আমাদের পাঁচ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ রকম অশান্তি চলতে থাকলে এ বার আমরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিরোধে নামব।’’