Lumbini Park

Bengal Polls: লুম্বিনীর প্রথম ভোটদানে ১৮ জন ‘মেডিক্যালি আনফিট’

‘মেডিক্যালি আনফিট’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? আচমকা লুম্বিনীতে কী এমন হল যে, একসঙ্গে এত জন অসুস্থ হলেন?

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৩
Share:

ছবি সংগৃহীত।

আগের রাতেও ঠিক ছিল, লুম্বিনি পার্ক মানসিক হাসপাতালের ৫৪ জন আবাসিক রাজ্যের চতুর্থ দফার বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু ভোটগ্রহণের দিন সকালে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, ১৮ জন আবাসিক ‘মেডিক্যালি আনফিট’। অতএব, তাঁদের ভোট দিতে পাঠানো সম্ভব নয়। এই যুক্তিতে আটকে গেল তাঁদের ভোটদান প্রক্রিয়া!

Advertisement

আর সেখানেই উঠছে কিছু প্রশ্ন। ‘মেডিক্যালি আনফিট’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? আচমকা লুম্বিনীতে কী এমন হল যে, একসঙ্গে এত জন অসুস্থ হলেন? তবে কি চিকিৎসা পরিকাঠামোয় কোনও গাফিলতি রয়েছে? অসুস্থতা যদি আচমকা না হয়ে থাকে, তবে কেন পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা হয়নি? কেন সে কথা কর্তৃপক্ষ জানাননি ওই হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটিকে? তবে কি মনোরোগীদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান লুম্বিনী কর্তৃপক্ষই? এত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানসিক রোগীদের দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।

এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটযন্ত্রে নিজেদের মত প্রয়োগ করেছিলেন পাভলভের ৫৫ জন এবং বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ৬৮ জন আবাসিক। সেটাও ছিল তাঁদের হয়ে দীর্ঘ সামাজিক আন্দোলনের ফসল। এ বার তাই ওই একই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে লুম্বিনী পার্কের ৫৪ জন আবাসিকের হাতে চলে এসেছিল ভোটার কার্ড। সূত্রের খবর, সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারলেন ৩১ জন। বাকিদের মধ্যে পাঁচ জন ভোট দিতে যেতে রাজি ছিলেন না। আর বাকিরা কর্তৃপক্ষের চোখে ‘মেডিক্যালি আনফিট’ হওয়ায় বুথ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি।

Advertisement

সেখানেই ক্ষোভ ওঁদের হয়ে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তাঁদের কথায়, “ওঁদের সব থেকে বেশি বোঝার কথা যাঁদের, সেই চিকিৎসকদের কাছেই ব্রাত্য ওঁরা! সেখান থেকেই ওঁদের প্রতি ভরসা না করার ছবি উঠে আসছে। কেন এখনও কোনও আবাসিক ভোট দিয়ে ফিরে আসার পরে নার্সিং স্টাফ বুথসঙ্গী সদস্যদের প্রশ্ন করবেন, ‘ওরা কিছু করেনি তো? সবাই ঠিকঠাক ছিল?’ অর্থাৎ ওঁরাই যেন অপরাধী! ওঁরা মানেই কি ভাঙচুর করা আর মারকুটে প্রকৃতি?’’ শনিবার লুম্বিনীর আবাসিকদের সঙ্গে কসবার একটি স্কুলের বুথে উপস্থিত সদস্যদের এক জন প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘ওঁদের জন্য কেন আজও এমন একপেশে মানসিকতা?”

মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার শুক্লা দাসবড়ুয়া জানান, সকাল থেকে কয়েক দফায় গাড়িতে ৩১ জনকে বুথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল‌। গ্রিন চ্যানেল করিয়ে নির্দিষ্ট ঘরে তাঁদের হাজির করানো হয়। এর জন্য ওই দিন সকালে লুম্বিনী পার্কের সুপার বুথে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথাও বলে আসেন। কী এই গ্রিন চ্যানেল? ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক সদস্য ঋত্ত্বিকা রায় জানান, পৃথক লাইন করে আবাসিকদের নিয়ে যাওয়া, ইভিএমের ছবি দেখিয়ে প্রত্যেক ভোটারকে ভোটদানের পদ্ধতি বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটাই এই গ্রিন চ্যানেলে সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে।

সব প্রশ্নের উত্তরে লুম্বিনী পার্কের সুপার বিশ্বজিৎ রায়ের বক্তব্য, “এই হাসপাতালে ২২৪ জন আবাসিক। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জন ভোটার কার্ড পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই ৫৪ জন এখনও ওষুধ খান। ফলে ওঁদের শারীরিক এবং মানসিক পরীক্ষা না করিয়ে বাইরে বার করা যাবে না‌। ভোটের দিন ওই পরীক্ষা করেই দু’জন মনোরোগ চিকিৎসক ৩১ জনকে অনুমতি দেন। চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা মানতেই হবে। নয়তো বাইরে কোনও কিছু ঘটলে সেই জবাব তো আমাকেই দিতে হবে।”

এই ব্যাখ্যা শুনে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায়ের মত, “যদি একসঙ্গে এত জন ‘মেডিক্যালি আনফিট’ হয়ে থাকেন, তবে তো লুম্বিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। তা ছাড়া, আগে থেকে তাঁরা আমাদের পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করতে বলেননি কেন? তার মানে এই যে, মনোরোগীদের ভোটদানের বিষয়টি তাঁদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”

সুপারের যুক্তি, ‘‘বিষয়টি এমন নয়। এই অসুস্থতা আগে থেকে বোঝা যায় না। ওই দিনের পর্যবেক্ষণেই তা ধরা পড়েছিল’’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement